ছায়াযুদ্ধ ছেড়ে ইসরায়েল–ইরান কি এখন সরাসরি যুদ্ধে

ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানছবি: রয়টার্স

সরাসরি ইসরায়েলে নিজ ভূখণ্ড থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করে সিরিয়ার দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে ইরান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান তাদের সক্ষমতা জাহির করার পাশাপাশি সম্মান রক্ষাও করেছে।

কিন্তু তা করতে বড় ধরনের একটি ঝুঁকি তৈরি করছে দেশটি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কি তাঁর দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সফলতাকে যথাযথ জবাব মনে করবেন নাকি ইরানের ওপর সরাসরি হামলা করে উত্তেজনা আরও বাড়াবেন?

ইরানি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান তাদের কথামতো ইসরায়েলের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু তারা আর উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তারা এ হামলায় কেবল ইসরায়েলের সামরিক ক্ষেত্র ও স্থাপনাগুলো বেছে নিয়েছিল, কোনো বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি চায়নি। এ ছাড়া আক্রমণ চালানোর আগেই এ নিয়ে অনেক জায়গায় জানিয়ে দিয়েছে।

বৈশ্বিক সংকটের ওপর গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলী ভায়েজ বলেন, ‘ইরান সরকার দামেস্কের হামলাকে কৌশলগত পরিবর্তনের বিন্দু ধরে নিয়েছিল। এর জবাব দিলে, ব্যর্থ হলে তাদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হতো। কিন্তু পাল্টা হামলা চালানোর ফলে যা এত দিন ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের ছায়াযুদ্ধ ছিল, তা বাস্তব ও আরও মারাত্মক সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি করল।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, ইরান তাদের হাতে থাকা কার্ড খেলে দিয়েছে। ছয় মাস ধরে তারা দেখছে, তাদের মধ্যপ্রাচ্যে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে।

ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি বলেন, অভিযানে পুরোপুরি ফল পাওয়া গেছে। অভিযান আর চালানোর অভিপ্রায় নেই। তবে তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের ভূখণ্ড বা অন্য কোথাও যদি ইরানি স্বার্থে ইসরায়েল আঘাত হানে, আমাদের পরবর্তী অভিযান এর চেয়ে আরও বড় হবে।’

কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েলের একের পর এক হামলার মুখে পড়েছে ইরান। ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী, সেনা কর্মকর্তাদের গোপনে হত্যা করা, পারমাণবিক ও সামরিক ক্ষেত্রগুলোতে বিস্ফোরণ, সাইবার হামলার মতো নানা আক্রমণ চালিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে ইরানি স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো ও সিরিয়ায় ইরানি কমান্ডারদের ওপর হামলা শুরু হয়। ভাকিল বলেন, ইসরায়েলের প্রতি ব্যাপক পশ্চিমা কূটনৈতিক সমর্থন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও তেহরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে যথাযথ জবাব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল। এখন দুই দেশের পুরোনো সমীকরণ বদলে গেছে। এখন আর ছায়াযুদ্ধ নয়, দুই পক্ষই সরাসরি হামলার জন্য প্রস্তুত। মূলত দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের পাল্টা জবাবের মধ্য দিয়ে নতুন বিপজ্জনক এক অধ্যায়ের শুরু হলো। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের ভূখণ্ড থেকে হামলার নির্দেশ দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। ইরান আর ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখিয়ে যাবে না।