তল্লাশি ও উদ্ধারকাজের সমাপ্তি টানল তুরস্ক

ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার তৎপরতা গুটিয়ে আনা হচ্ছে। এতে হতাশ বেঁচে যাওয়া লোকজন, তাঁরা অন্তত স্বজনের লাশটি দেখতে চান। গত শনিবার তুরস্কের কাহরামানমারাসে
ছবি: এএফপি

তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৬ হাজার। এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ। ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত এলাকায় চলছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। এর মধ্যেই তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে তুরস্ক।

তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ এলাকায় উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এএফএডি) প্রধান ইউনুস সিজির। গতকাল রোববার তিনি জানান, আজ রাত থেকেই বেশির ভাগ এলাকায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টানা হবে।

তবে নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা কত, তা নির্দিষ্ট করে জানাচ্ছে না তুরস্ক বা সিরিয়া। এদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আশায় এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনেরা। তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। প্রিয়জনকে জীবিত না পেলেও তাঁরা অন্তত লাশটা চান। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের এই আকুতি উদ্ধারকারীদের প্রতি।

‘অন্তত লাশটা খুঁজে দিন’

তুরস্কে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ বুলডোজার দিয়ে সরাচ্ছিলেন আকিন বোজকার্ট। এই বুলডোজারচালক বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশ খুঁজে পেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে বুঝিয়ে দেবেন তিনি, যাতে স্বজনেরা জানাজা পড়তে পারেন, লাশ দাফন করতে পারেন। প্রিয়জনের একটা কবর তো অন্তত থাকল! ৪২ বছর বয়সী আকিন বোজকার্ট আরও বলেন, ‘আপনি কি একটি লাশ খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবেন? পরিবারের কাছে লাশ পৌঁছে দিতে আমরা তা করি।’

আকিনের বাড়ি তুরস্কের কায়সেরি শহরে। ভূমিকম্পের পর বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরাতে সাহায্য করতে আকিন দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস শহরে গিয়েছিলেন।

আকিন বলেন, তিনি যখন তাঁর বুলডোজার নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষে বসে ছিলেন। তিনি তাঁর নিখোঁজ মেয়েকে খুঁজে দেওয়ার জন্য তাঁদের অনুরোধ করেন। সেই বাবা বলেন, তাঁরা যাতে দয়া করে তাঁর মেয়ের দেহাবশেষ খুঁজে বের করেন, যাতে মেয়ের দাফন করতে পারেন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পকবলিত আড়াই কোটির বেশি মানুষের বর্তমানে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূকম্পনপীড়িত তুরস্কের ১০টি অঞ্চলে ৩ মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সিরিয়া ও তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৭০ লাখই শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ।