কাস্ত্রোর দেহভস্ম ঘুরবে দেশজুড়ে, কিউবায় শোক

ফিদেল কাস্ত্রো
ফিদেল কাস্ত্রো

‘ফিদেল মারা যাননি, কারণ জনগণই ফিদেল। আমি ফিদেল। তিনি কিউবাকে মানচিত্র দিয়েছেন, বিশ্ববাসীর সামনে কিউবাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন’, চিৎকার করে বলছিলেন রাউল আলেজান্দ্রো পালমারস। জিনস আর সাদা টি-শার্ট পরা এই তরুণের হাতে জাতীয় পতাকা। কিউবার রাজধানী হাভানার রাস্তায় নেমেছেন তিনি আরও শত শত তরুণের সঙ্গে। তাঁরা সবাই হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের মুখে স্লোগান, ‘আমিই ফিদেল’।
কিউবান বিপ্লবের নায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনাবসানের পর নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের শুরুতে দেশটির রাজধানীতে এ রকম খণ্ড খণ্ড দৃশ্য। গত শনিবারই ফিদেলকে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী দাহ করা হয়।
শোকের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করা হয়েছে। আজ সোমবার হাভানার রেভল্যুশন স্কয়ারে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে তাঁর দেহভস্ম বহনকারী ভস্মাধার আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার বিভিন্ন প্রান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবে ফিদেলের গেরিলা বাহিনী যে পথে হাভানা পৌঁছেছিল, তাঁর উল্টোপথ অনুসরণ করবে দেহভস্ম। এভাবে সেটা সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবা শহরে গিয়ে পৌঁছাবে। ৪ ডিসেম্বর সেখানেই তাঁর রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টি শেষে দেহভস্ম সমাহিত করা হবে। ওই দিন হাভানার রেভল্যুশন স্কয়ারে আরেকটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশি বিশিষ্ট অতিথিরা যোগ দেবেন এ অনুষ্ঠানে।
ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি সম্মান জানিয়ে কিউবার সংবাদপত্রগুলো গতকাল রোববার কালো রঙে ছাপা হয়। বরাবর সেটা বিপ্লবের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাল কালিতে ছাপা হয়ে থাকে।
কিউবার মানুষের কাছে কাস্ত্রো কী ছিলেন, তা বলতে গিয়ে হাভানার রাস্তায় ৬০ বছর বয়সী রাফায়েল উরবে বলেন, ‘আমার জন্য প্রথমে আমার মা, আমার সন্তান, আমার বাবা এবং তারপরই ফিদেল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু গরিবই ছিলাম না, আমরা ছিলাম হতভাগ্য। তারপর ফিদেল এলেন এবং বিপ্লব এল। তিনি আমাকে মনুষ্যত্ব দিলেন। সবকিছুতেই আমি তাঁর কাছে ঋণী।’
অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ৭৮ বছর বয়সী রেনে পেরেজ বলেন, শিক্ষার বিস্তার এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ফিদেল যা করেছেন, তার নজির পৃথিবীতে খুব একটা নেই।

ফ্লোরিডায় উল্লাস

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে উল্লাসে মেতে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কিউবার ভিন্নমতাবলম্বী নির্বাসিত লোকজন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ লাখ কিউবান নাগরিকের বাস। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ফ্লোরিডায় থাকে। এই অঙ্গরাজ্যের মায়ামি শহরে গতকালও দ্বিতীয় রাতের মতো তারা আনন্দে মেতে থাকে। ফিদেলের মৃত্যুসংবাদ প্রচার হওয়ার পরপরই গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কিউবার লোকেরা উল্লাস করতে করতে সড়কে নেমে যায়। নেচে-গেয়ে তারা ফিদেলের মৃত্যুসংবাদ উদ্‌যাপন করেছে।