সাংবাদিকের চোখে একজন কাস্ত্রো

ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে সাংবাদিক হেনরি রেমন্ট। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে সাংবাদিক হেনরি রেমন্ট। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

‘ফিদেল কাস্ত্রো এমন একজন নেতা, যাঁর ছিল সম্মোহনী জনপ্রিয়তা।’ এমনভাবেই ফিদেল কাস্ত্রোকে স্মরণ করেন হেনরি রেমন্ট। তিনি ছিলেন মার্কিন বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড প্রেসের কিউবার সংবাদদাতা।
১৯৬১ সালের ১৭ এপ্রিল রেমন্টকে আটক করে ফিদেল কাস্ত্রোর সামরিক বাহিনী। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ছয় দিন পর কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি অনেক সময় কাটান ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নেন আটবার।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ৯০ বছর বয়সে মারা যান অবিসংবাদী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় অর্ধশতক আগে ঘটে যাওয়া নিজের জীবনের কিছু ঘটনা গণমাধ্যমকে বলেন রেমন্ট। এখন রেমন্টের বয়স ৮৯ বছর।

হাভানার কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রেমন্টের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। নিজের ভুল অকপটে স্বীকার করেন কাস্ত্রো। এরপর যেন কিছুটা বন্ধুর মতোই হয়ে যায় সম্পর্কটা। ফিদেল কাস্ত্রো, তিনি এবং আরও কয়েকজন মিলে জিপে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন কিউবার পথে প্রান্তরে। কখনো শিকারে, কখনো মেতেছেন পানীয়তে।

রেমন্ট মনে করেন, মহান এ নেতার সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল। তিনি জনগণের জন্য বহু কল্যাণমূলক কাজ করেছেন, আবার কঠোর হয়েছেন বিরোধীদের ওপর।

রেমন্ট জানান, ছয় দিনের কারাবাস তাঁকে বিপুল অভিজ্ঞতা এনে দেয়। কারাগারে তাঁর সঙ্গে আরও ৫০ জন বন্দী ছিলেন। বন্দীরা কেউ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, মুষ্টিযোদ্ধা। কেউবা গ্রাম্য নাপিত। কারাগারের প্রথম দিন এক বন্দী রেমন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে, ‘তোমাকে জাতীয় পর্যটক সেন্টারে অভিবাদন জানাচ্ছি।’ বন্দীরা গান গাইত, গল্প করত। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হাসতে পারত।

রেমন্টের কাছে এটা অবিচার মনে হলেও তিনি মানেন, কাস্ত্রো বিপ্লব করছিলেন। সেই বিপ্লব কিউবাকে পরিবর্তন করেছে। যেই দেশটির কিছুই ছিল না, সেই দেশটি বিশ্বের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশে পরিণত হয়। রেমন্ট বলেন, ‘আমার চোখে তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন।’
সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে, কাস্ত্রো রেমন্টকে তাঁর স্বাক্ষর করা একটি বিপ্লবী বইয়ের অনুলিপি দিয়েছিলেন। মলাটে তিনি লিখেছিলেন, ‘ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে।’