ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো

নরওয়েতে হোটেলের বাইরে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করেছেন। এক বছরের বেশি সময় তিনি দেশটিতে আত্মগোপনে ছিলেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ উপলক্ষে নরওয়ের রাজধানী অসলো পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মাচাদো এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন সরকারের সহায়তা পেয়েছি।’

নিজের সহযোগীদের সুরক্ষা দিতে চান জানিয়ে মাচাদো তাঁর দেশ ছাড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প প্রশাসন মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ত্যাগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

নরওয়েতে ভেনেজুয়েলার জনসংখ্যা খুবই কম হলেও অসলোতে মাচাদোর উপস্থিতি উপলক্ষে তাঁর দেশের অনেকে তাঁকে দেখতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি যখন গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় আসেন, তখন সেখানে জড়ো হওয়া ভেনেজুয়েলার প্রবাসীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাঁরা স্প্যানিশ ভাষায় ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘শান্তি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন।

গত বছর ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই মাচাদো আত্মগোপনে চলে যান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সমন্বিত হুমকি ও বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন সত্ত্বেও নির্বাচনে মাচাদোর সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হন।

অবশ্য নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান। একই সঙ্গে তিনি বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে মাচাদো বলেন, ভেনেজুয়েলার সরকার তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানত না। জানলে তারা তাঁকে নরওয়েতে যেতে বাধা দিত। নরওয়েতে গত বুধবার মাচাদোর পক্ষে তাঁর মেয়ে শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।

ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেয়ো বুধবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, সরকার তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে অবগত ছিল। ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, মাচাদো দেশ ছাড়লে তাঁকে পলাতক বলে গণ্য করা হবে।

মাচাদো স্বীকার করেন, বর্তমান সরকারের অধীন ভেনেজুয়েলায় ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় কবে ফিরতে পারবেন, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।

নিজের নরওয়ে সফর প্রসঙ্গে মাচাদো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করার ঝুঁকি যদিও খুব বেশি ছিল, তবু তা সার্থক হয়েছে। ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি সম্ভবত আরও বেশি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারের ওপর চাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার পর মাচাদো বিশ্ব মঞ্চে ফিরে এলেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূল থেকে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে।

মাচাদো ট্যাংকার জব্দ করার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বারবার মাদুরোর অর্থের উৎস বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

নোবেলজয়ী মাচাদো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এতে মাদুরোর শাসনব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে।’

মাচাদো অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি কেবল এটুকু বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর তিন সন্তান এবং দলের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপন এবং নিজের চিকিৎসায় সময় দেবেন।