১৬ হাজার পায়ের ছাপে জানা গেল ডাইনোসরের অদ্ভুত আচরণ

ডাইনোসরফাইল ছবি: রয়টার্স

তিনটি আঙুল। ধারালো নখ। লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার মধ্যাঞ্চলে এমন অসংখ্য পায়ের ছাপ দেখা যায়। ছাপগুলো ভয়ংকর দৈত্যের—এমন কথাই প্রচলিত ছিল। স্থানীয় লোকজন বলতেন, সেই দৈত্যগুলো নাকি এতটাই শক্তিশালী যে তাদের পায়ের ছাপ বসে যেত পাথরের ওপর।

একসময় কল্পনার দিন শেষ হলো। ষাটের দশকের দিকে সেখানে বিজ্ঞানীরা এলেন। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে জানালেন, ছাপগুলো আসলে দোপেয়ে বিশাল সব ডাইনোসরের। আন্দিজ পর্বতমালার এ অঞ্চলে ছয় কোটি বছর আগে নদী–খালে দাপিয়ে বেড়াত সেগুলো। জলাশয়গুলো বিলীন হয়েছে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে তোরো তোরো নামের একটি গ্রাম আর পার্ক।

সম্প্রতি ওই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। সেখানে তাঁরা দোপেয়ে বিভিন্ন ডাইনোসরের ১৬ হাজার ৬০০ পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে ছিল ভয়ংকর মাংসাশী টিরানোসরাস রেক্সের পায়ের ছাপও। গবেষণার ফল গত বুধবার বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী পিএলওএস ওয়ান–এ প্রকাশিত হয়েছে।

ছয় বছর ধরে ওই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে বলিভিয়ার ওই ডাইনোসরদের অদ্ভুত একটি আচরণ সম্পর্কে জানা গেছে, তা হলো স্থলচর এই ডাইনোসরগুলো সাঁতার কাটার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টার সময় জলাশয়ের তলদেশে কাদায় সেগুলোর পায়ের ছাপ পড়ে যায়। এমন ১ হাজার ৩৭৮টি পায়ের ছাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এত বেশি পায়ের ছাপ এর আগে একসঙ্গে কোথাও পাওয়া যায়নি।

তবে অদ্ভুত একটি বিষয় হলো, পায়ের ছাপ পাওয়া গেলেও এখানে কখনো ডাইনোসরের হাড় বা জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি। এর পেছনে বিজ্ঞানীরা কিছু কারণ দেখছেন। এর একটি হলো চাষাবাদ ও উন্নয়ন কার্যক্রমে হাড় বিনষ্ট হয়ে যাওয়া। গবেষকেরা আরও বলেছেন, এখানে হয়তো ডাইনোসররা স্থায়ীভাবে বসবাস করতই না; বরং পেরু থেকে আর্জেন্টিনায় চলাচলের একটি পথ হিসেবে ব্যবহার করত।

তবে জীবাশ্মের চেয়ে অনেক সময় পায়ের ছাপ থেকে ডাইনোসরের আচরণ সম্পর্কে বেশি জানা যায় বলে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের গবেষক অ্যান্থনি রোমিলিও। তিনি বলেন, পায়ের ছাপ থেকে গবেষকেরা জানতে পারেন, কখন ডাইনোসররা ধীরে চলাচল করেছিল, কখন দ্রুত চলেছিল, আর কখনই–বা সেগুলো থমকে দাঁড়িয়েছিল।