নীল তিমি কি ‘সবচেয়ে বড় প্রাণী’র খেতাব হারাতে যাচ্ছে

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা আদিম প্রজাতির এমন এক তিমির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন, যা নীল তিমির চেয়েও ওজনে ভারী হতে পারে
ছবি: এএফপি

নীল তিমিকে পৃথিবীর এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় ও ভারী প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা আদিম প্রজাতির এমন এক তিমির দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন, যা নীল তিমির চেয়েও ওজনে বেশি হতে পারে। তাঁরা পেরুতে এ ধরনের তিমির আংশিক কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছেন। চার কোটি বছর আগে পেরুসেটাস কোলোসাস নামের এ তিমির অস্তিত্ব ছিল।

গতকাল বুধবার নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

পেরুর মরু অঞ্চলে পাওয়া আদিম প্রজাতির তিমির কঙ্কাল বিশ্লেষণ করে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল বলেছে, প্রাণীটির শরীরের গড় ভর ১৮০ টন। শুধু যে প্রাণীটির নমুনা পাওয়া গেছে, সেটিকে বিবেচনায় নিলে এটি ওজনের দিক থেকে এককভাবে নীল তিমিকে ছাড়াতে পারেনি। কারণ, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় নীল তিমির ওজন ১৯০ টন।  

তবে গবেষকেরা বলছেন, আদিম প্রজাতির এ তিমির (পেরুসেটাস কোলোসাস) ওজন ৮৫ থেকে ৩৪০ টন পর্যন্ত হতে পারে। এর মানে হলো, এগুলো নীল তিমি থেকেও হয়তো বড় ছিল।

২০১০ সালে জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ মারিও উরবিনা প্রথমবারের মতো আদিম প্রজাতির এ তিমির জীবাশ্মের সন্ধান পান। পেরুর দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলসংলগ্ন মরুভূমিতে কয়েক দশক ধরে গবেষণার কাজ চালিয়েছেন তিনি। পেরুর লিমায় এএফপিকে উরবিনা বলেন, ‘এর মতো এত বড় প্রাণীর অস্তিত্ব আর কখনো দেখা যায়নি। এটিই প্রথম। আমরা যখন প্রথমবারের মতো এর সন্ধান পাই, তখন কেউই আমার কথা বিশ্বাস করছিল না।’

গবেষকেরা বলছেন, তাদের এই আবিষ্কার, উত্তরের চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্নের জন্ম দিতে যাচ্ছে। অন্য জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞদের এখন এ নিয়ে ভাবতে হবে।

বুধবার পেরুর রাজধানী লিমায় ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আদিম প্রজাতির এ তিমির জীবাশ্ম উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, প্রাণীটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২০ মিটার (৬৫ ফুট)।

বিজ্ঞানীরা পেরুর মরুভূমিতে ১৩টি বড় বড় কশেরুকা পেয়েছেন। এগুলোর প্রতিটির ওজন ২০০ কিলোগ্রামের কাছাকাছি। চারটি পাঁজর এবং নিতম্বের একটি হাড়ও পাওয়া গেছে। বড় বড় এসব জীবাশ্ম সংগ্রহ এবং তা গবেষণার উপযোগী করতে গবেষকদের কয়েক বছর লেগে গেছে। তাঁরা আসলে কিসের সন্ধান পেয়েছেন, তা নিশ্চিত হতে বেশ সময় লেগেছে।

বুধবার গবেষকেরা বলেছেন, আদিম এই তিমি বাসিলোসাউরিডের পরিবারভুক্ত নতুন একটি প্রজাতি, যা সেটাসিয়ানসের বিলুপ্ত প্রজাতি।

বর্তমানে সেটাসিয়ানসের প্রজাতিগুলোর মধ্যে আছে ডলফিন, তিমি ও শুশুক। তবে তাদের পূর্বসূরিরা স্থলভাগে বসবাস করত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো পানিতে বসবাস শুরু করে। ধারণা করা হয়, বাসিলোসাউরিডই প্রথম সেটাসিয়ান, যা পুরোপুরি পানিতে বসবাস করেছে।

গবেষক এলি আমসন এএফপিকে বলেন, সম্ভবত অন্য বাসিলোসাউরিডের মতো পেরুসেটার কোলোসাস প্রজাতির তিমির মাথা তাদের শরীরের তুলনায় অনেক ছোট। তবে এটা নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো হাড় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কোনো দাঁত না পাওয়া যাওয়ায় এ প্রজাতির তিমি কী খেত, তা–ও বলা সম্ভব হচ্ছে না।