এর উৎসস্থল ছিল ভূগর্ভের ৪১ মাইল গভীরে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল হলো পেরুর সীমান্তবর্তী ইকুয়েডরের বালাও মিউনিসিপ্যালিটির কাছে। কুয়েনকা শহরের সেলাই পণ্যের বিক্রয়কর্মী মাগালি এসকান্ডন বলেন, ‘মানুষ ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করেছিল। আমিও রাস্তায় নেমে এসেছিলাম।’
ইকুয়েডরের সরকারি হিসাব বলছে, ভূমিকম্পে ইকুয়েডরের এল ওরো প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ প্রদেশে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আজুয়ায় প্রদেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কতজন আহত হয়েছেন, সে তথ্য দেয়নি দেশটি।
এদিকে পেরুর সরকারি হিসাব বলছে, ইকুয়েডরের সীমান্তে পেরুর তুম্বেস শহরে মাথায় ইট আঘাতে চার বছর বয়সী এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুটির চাচা ডেভিড আলভারাদো বলেন, ‘আমি আমার ভাতিজির সঙ্গে বাইরে খেলছিলাম। হঠাৎ তার মাথার ওপর ইট এসে পড়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের কম্পন গুয়াকিল, কুইটো, মানাবি, মান্তাসহ অন্যান্য শহরেও তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো এল ওরো প্রদেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে একটি হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদেরও দেখতে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে আজুয়ায় প্রদেশে যাবেন।
টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও পোস্টে প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো বলেন, আমি কেবল মাচালা শহর পরিদর্শন শেষ করেছি...আমি সরকারি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সম্পদের সরবরাহ করার অনুমোদন দিয়েছি।’ এর আগে প্রেসিডেন্ট জনগণকে ‘শান্ত থাকার ও ভবনগুলোর ক্ষতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কুইটোর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, এ শহরে একটি বাড়ির সামনের অংশটি ভেঙে একটি গাড়ির ওপর পড়েছে। কুয়েনকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ শহরে কর্মরত এএফপির প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শহরের হিস্টোরিক সেন্টারের পুরোনো বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাটি সরে যাওয়ায় কুয়েনকা শহরের রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এর কাছাকাছি এল ওরো প্রদেশে একটি টাওয়ার ভেঙে পড়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পেরুর সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে পেরুর উত্তর ও মধ্য উপকূল কম তীব্রতা নিয়ে কেঁপে উঠেছে। তুম্বেস শহরে ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইকুয়েডরের জিওফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক মারিও রুইজ এফএম মুন্ডো রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের জন্য ভূমিকম্পের এই মাত্রা অতি উচ্চমাত্রার।’
পেরুভিয়ান সিসমোলজিক্যাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭ দশমিক ০ মাত্রা বলেছিল। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।
ইকুয়েডরের বালাওয়ে ভূমিকম্পের পর প্রথম পরাঘাতের মাত্রা ৪ দশমিক ৮ রেকর্ড করা হয়েছিল। ইকুয়েডরের নৌবাহিনী জানিয়েছে, দেশে সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই।
২০১৬ সালে ইকুয়েডরের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মানাবি ও এসমেরালদাসে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ৬৭৩ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল অন্তত ৩ বিলিয়ন ডলার।