রেস্তোরাঁ থেকে সুইমিংপুল, কী নেই এই কারাগারে

সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর তোকোরন কারাগারের একটি রেস্তোরাঁর শূন্য দৃশ্য
ছবি: রয়টার্স

সাজা ভোগ করতে দণ্ডিত ব্যক্তিদের কারাগারে থাকতে হয়। অবশ্য বন্দীদের সংশোধনেরও সুযোগ দিয়ে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ। সে জন্য কারাগারে থাকে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা। কিন্তু একটি কারাগারে যদি রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে সুইমিংপুলের ব্যবস্থাও থাকে, সেটাকে কারাগার বলা যায় কি না, দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।

ভেনেজুয়েলার তোকোরন কারাগারকে ঠিক কারাগার না বলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি শহর বলা যায়। কী নেই এই কারাগারে? রেস্তোরাঁ ও সুইমিংপুল থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানা এবং বন্দীদের বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ।

একটি কারাকক্ষের দরজায় লেখা ছিল, ‘জিএনবি: ট্রেনটি থামল।’ জিএনবি ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল গার্ডের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর ট্রেন বলতে এখানে চক্রটিকে বোঝানো হয়েছে।

কারাগারটি নিয়ন্ত্রণ করত একটি শক্তিশালী অপরাধী চক্র। তারা এটিকে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। সেখানকার একটি রেস্তোরাঁর দেয়ালে লেখা, ‘কাবাব ঘর; উপভোগ করুন।’

চলতি সপ্তাহে কারাগারটিতে অভিযান চালায় দেশটির কয়েক হাজার সেনা। কারাগারটি এখন ফাঁকা। সেখানে থাকা ১ হাজার ৬০০ বন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ নামের চক্রটি এই কারাগার নিয়ন্ত্রণ করত। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে চক্রটির সদস্য রয়েছে।

অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এক বন্দীর স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাইরের চেয়ে কারাগারের জীবন ছিল তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যের ও নিরাপদ।’

সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কারাগারটির ভেতরের অবস্থা দেখার সুযোগ পান সাংবাদিকেরা। গত শনিবার প্রায় ৩০ জন সাংবাদিককে কারাগারটির নির্দিষ্ট কিছু এলাকা অল্প সময় ঘুরে দেখানো হয়। তবে বন্দীদের খনন করা পাকা সুড়ঙ্গপথ দেখার সুযোগ পাননি সাংবাদিকেরা। এসব সুড়ঙ্গপথের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা দেখতে পাননি পিঙ্ক ফ্লেমিঙ্গো থাকা চিড়িয়াখানাটিও।

একটি কারাকক্ষের দরজায় লেখা ছিল, ‘জিএনবি: ট্রেনটি থামল।’ জিএনবি ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল গার্ডের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর ট্রেন বলতে এখানে চক্রটিকে বোঝানো হয়েছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ ধরনের বার্তা হয়তো সরকারই জনগণের কাছে পৌঁছাতে চায়। কারণ, একটি অপরাধী চক্রের হাতে কারাগারের নিয়ন্ত্রণ থাকা আর সেখানে বন্দীদের বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়টি সরকারের জন্যই অস্বস্তিকর।

বাইরের চেয়ে কারাগারের জীবন ছিল তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যের ও নিরাপদ
বন্দীর স্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডমিরাল রেমিহিয়ো সেবায়োস বলেন, কারাগারের চারজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ অপরাধী চক্রটির সদস্য প্রায় পাঁচ হাজার। ২০১৪ সালে চক্রটির বিষয়ে জানাজানি হয়। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মতো মাফিয়া কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চক্রটি। এমনকি বৈধ ও অবৈধভাবে খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনেও চক্রটির প্রভাব আছে।