ওর্তেগার ওপর চাপ প্রয়োগে আইন করছে যুক্তরাষ্ট্র

ডেনিয়েল ওর্তেগা।
ছবি: রয়টার্স

নিকারাগুয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল ওর্তেগার ওপর চাপ প্রয়োগে নতুন একটি আইন পাস করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে একটি বিল আনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম মায়ামি হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, নিকারাগুয়ায় বিরোধী নেতাদের ওপর যে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তা বন্ধে এই আইন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিলটি উত্থাপন করেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মারিয়া এলভিরা সালাজার।

আইনপ্রণেতা হওয়ার আগে নিকারাগুয়ায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন মারিয়া। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল ওর্তেগার সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন তিনি। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডেনিয়েল ওর্তেগার আমলে নিকারাগুয়া নিপীড়ক শাসকের দেশে পরিণত হয়েছে। নিকারাগুয়ার সঙ্গে যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তার পর্যালোচনার জন্য প্রস্তাবটি এনেছেন মারিয়া।

মার্কিন কংগ্রেসে আনা এই বিলে সমর্থন দিচ্ছেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি—দুই দলের আইনপ্রণেতারাই।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিরোধীদের দমনের অংশ হিসেবে গত রোববার নিকারাগুয়ার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে ডেনিয়েল ওর্তেগার সাবেক জোটসঙ্গীরাও রয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ বলেছে, নিকারাগুয়ার রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপকে উসকে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে গ্রেপ্তার নেতাদের বিরুদ্ধে।

চলতি বছরের নভেম্বরে নিকারাগুয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করতে পারেন, এমন চারজনসহ ১২ জন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার পালাবদলের তিক্ত ঘটনা আগেও দেখা গেছে নিকারাগুয়ায়। ১৯৭০-এর দশকের শেষে আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট একনায়ক সোমোজা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল ওর্তেগা। পরবর্তী এক দশক তিনি ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। অবশ্য ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এরপর তাঁর ক্ষমতায় ফিরতে সময় লাগে ১৬ বছর। ২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ওর্তেগা আবার ক্ষমতায় ফেরেন।

বিশ্লেষকদের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর্তেগা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলেছেন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ওর্তেগা সমঝোতা করেছেন ব্যবসায়ী ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে। একসময়ের বামপন্থী ওর্তেগা রূপান্তরিত হয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানে। নানা প্রক্রিয়ায় পুরোনো শত্রুদের কাছে টেনে নিয়েছেন। আর দূরে ঠেলে দিয়েছেন পুরোনো মিত্রের অনেককেই। এ ছাড়া ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সংবিধান সংশোধন করার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

নিকারাগুয়ায় দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকা যাবে না, এমন ধারা সংবিধান থেকে বিদায় করেছেন ওর্তেগা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তিনি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ওই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায় বলে অভিযোগ আছে। বলা হয়ে থাকে, সেই বিক্ষোভে শত শত বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া আহত হয়েছিলেন হাজারো বিক্ষোভকারী।