কবে করোনার টিকা পাবে ওরা?

করোনার টিকা পরীক্ষা করছেন গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

জিম্বাবুয়ের বাসিন্দা লয়েস চিংগান্দু। যুক্তরাজ্যে আসা করোনার টিকা নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। আছে কেবল উদ্বেগ। বিশ্বের অনেকের মতো লয়েসও কবে টিকা নেবেন, সে অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান। তবে নিজের দেশ জিম্বাবুয়ে কবে সে টিকা পাবে, তা জানেন না লয়েস। জীবদ্দশায় টিকা পাবেন, এমনটাই আশা করেন তিনি।

শুধু জিম্বাবুয়ে নয়, মেক্সিকো, পাকিস্তানসহ লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশের কাছে করোনার টিকা মানে অপেক্ষার প্রহর গোনা। লয়েস জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে এইচআইভি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করেন। প্রতিদিন তিনি মানুষকে এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়ে মারা যেতে দেখেন। লয়েস বলেন, যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, কেবল তাঁরাই ওষুধ কিনতে পারেন। সুবিধাভোগীরা যখন মনে করবে গরিবদের বাঁচানোর সময় এসেছে, তখনই আমরা টিকা পাব।

চিংগান্দু পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সদস্য। ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউভুক্ত দেশ ও কানাডাকে টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি টিকা মজুত রেখেছে কয়েকটি দেশ। কানাডা তাদের জনগণকে পাঁচবার দিতে পারে, এমন পরিমাণ টিকা মজুত রেখেছে। চিংগানদু ও পিপলস ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন মনে করে, এ ধরনের কাজ অনৈতিক। তারা বলছে, অতিরিক্ত টিকা যেসব দেশে প্রয়োজন, তাদের সরবরাহ করা উচিত।

১৮৯টি দেশ কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে সই করেছে। কোভ্যাক্সের আওতাভুক্ত ৯২টি নিম্ন অথবা মধ্যম আয়ের দেশে দাতারা তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে টিকা দেবে। যুক্তরাজ্য এ তহবিলে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তহবিলে কোনো বরাদ্দ দেয়নি।

আপাতত কোভ্যাক্স একটি দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে টিকার অন্তর্ভুক্ত করবে। মেক্সিকো কোভ্যাক্সের বড় সমর্থক। দেশটির প্রধান টিকা সমন্বয়ক মার্থা ডেলাগোস মনে করেন, মেক্সিকোতে কোভিড–১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে ২০ শতাংশ জনগণের জন্য বরাদ্দ টিকা যথেষ্ট নয়। তিনি টিকা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই কয়েক মাস সংকটজনক। দেরি করা মানে জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। ডেলাগো আরও বলেন, মেক্সিকোর টিকা কেনার মতো অর্থ আছে। তবে লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের কাছে এখন টিকা কেনার মতো অর্থ নেই। অনেক দেশের জন্য টিকা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো কোভ্যাক্স।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়সাল সুলতান বলেছেন, মেক্সিকোর মতো টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে পাকিস্তান। তবে এখন পর্যন্ত টিকা নিশ্চিত হয়নি। টিকা কাজ করবে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান অর্থ দিতে পারবে না। হাতে গোনা কয়েকটি দেশেই কার্যকারিতা নিশ্চিত না হয়ে টিকা কেনার সামর্থ্য রাখে।

লয়েস চিংগান্দু ও পিপলস ভ্যাকসিন চায় টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ভাগাভাগি করুক। যাতে টিকার জিনগত সংস্করণ তৈরি করা যায়।

ডব্লিউটিওর কিছু দেশ এ প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এর বিরোধিতা করেছে। এসব কারণে কিছু দেশের কাছে করোনার টিকা মানে কেবলই অপেক্ষা।