করোনার ঝুঁকিতে ভেনেজুয়েলার শরণার্থীরা

কলম্বিয়ায় অসংখ্যা ভেনেজুয়েলার শরণার্থী বসবাস করছে
ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারিতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া প্রতি পাঁচজন ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মধ্যে দুজন উচ্ছেদ হয়েছেন। গতকাল বুধবার মানবাধিকার সংস্থা ইন্টার-আমেরিকান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (আইএসিএইচআর) প্রকাশিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লাতিন আমেরিকায় অন্য ভাড়াটেদের তুলনায় শরণার্থীদের আশ্রয় হারানোর ঝুঁকি বেশি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশী কলম্বিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে অর্থনীতিতে ধস, খাবার ও ওষুধের সংকটের কারণে প্রায় ৫০ লাখ ভেনেজুয়েলার নাগরিক দেশ ছেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ কলম্বিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আইএসিএইচআর ও কয়েকটি দাতব্য সংস্থা মিলে লাতিন আমেরিকার সাতটি দেশের প্রায় ১ হাজার ২২০ জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এতে দেখা গেছে, উচ্ছেদ হওয়া ভাড়াটেদের ১১ শতাংশ গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি চারজনের তিনজনই ভেনেজুয়েলার নাগরিক। উচ্ছেদের পর তাদের থাকার জায়গা বলতে কিছু নেই। সড়কে বসবাসকারী এই ভেনেজুয়েলাবাসীর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

আইএসিএইচআরের কমিশনার জুলিসা ম্যানটিলা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অভিবাসী, শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানবাধিকারকে প্রভাবিত করে উচ্ছেদ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা ভেনেজুয়েলাবাসীর জন্য উপযুক্ত আবাসন–সুবিধার ওপর প্রভাব ফেলেছে।’

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, যাঁরা উচ্ছেদের পর থাকার নতুন জায়গা খুঁজে পেয়েছিল, তাদের ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন দ্বিতীয়বার উচ্ছেদের শিকার হয়। এদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন অন্তঃসত্ত্বা বা নতুন মা।

মহামারিতে চাকরি হারিয়ে অনেক ভেনেজুয়েলাবাসী চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ টিকে থাকতে বিকল্প কাজে যুক্ত হয়েছেন। কেউ খাবার বিক্রি, কেউ ঘরদোর পরিষ্কার বা কেউ ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ কোনো রকমে একটি ঘরে বাস করছেন এবং অনেকেই এর ভাড়া দিতে পারেননি। ভেনেজুয়েলার যেসব নাগরিক শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত নন, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ।

সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে, ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরা যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে বাড়িওয়ালাদের হুমকি, সহিংসতা এবং হস্তক্ষেপের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করেন।

অবশ্য, চলতি মাস থেকেই কলম্বিয়ার পক্ষ থেকে ভেনেজুয়েলার শরণার্থীদের সাময়িক সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী দেশটিতে কাজ করার অধিকার পাবেন।