কিউবার টিকা নিতে চুক্তি করল ইরান

করোনার টিকা পরীক্ষা করছেন গবেষকেরা
প্রতীকী ছবি : রয়টার্স

কিউবার সবচেয়ে অগ্রগামী টিকাপ্রযুক্তি ইরানকে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়েছে। শুক্রবার কিউবার পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরানে তাদের টিকাটির চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা চালানো হবে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ও কিউবা দুটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকায় প্রায়ই বিদেশি ওষুধ কোম্পানি তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। এতে দুটি দেশই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি দেশেরই নগদ অর্থের ঘাটতি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে করোনার টিকা কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরান। দেশটি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি টিকা আমদানি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন। শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তৃতায় খামেনি বলেন, পশ্চিমা দেশে তৈরি টিকায় আস্থা পাচ্ছেন না।

গত মাসে ইরান প্রথম তাদের নিজস্ব করোনার টিকার পরীক্ষা চালায়। অন্যদিকে কিউবার চারটি টিকার পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে কিউবার সবচেয়ে এগিয়ে থাকা টিকাটি হচ্ছে ‘সবেরানা ২’। গত ২২ ডিসেম্বর টিকাটির দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন হাভানায় দেড় লাখ মানুষের ওপর সবেরানা-২ টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা করা হবে।

কিন্তু কিউবার করোনার সফল ব্যবস্থাপনার কারণে সংক্রমণের হার কম থাকায় সবেরানা-২ টিকাটির বিদেশে বড় আকারে পরীক্ষা করতে হবে। এদিকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত দেশ।

কিউবার ফিনলে ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট শুক্রবার বলেছে, তারা ইরানের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যাতে সেখানে সবেরানা–২ টিকার পরীক্ষা চালানো যায়।

এই টুইট বার্তায় ফিনলে ইনস্টিটিউট বলেছে, এই চুক্তির ফলে দুটি দেশ দ্রুত সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে উন্নত প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে পারবে।

কিউবা বলছে, বেশ কয়েকটি দেশ তাদের করোনার টিকা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ইরানের সঙ্গেই তাদের প্রথম চুক্তি হয়েছে।

ইরানের গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে তৃতীয় ধাপের করোনার টিকার পরীক্ষা করা হবে। প্রযুক্তি স্থানান্তর ও যৌথ উৎপাদনের শর্তে ইরানে সবেরানা-২ টিকাটির পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গত নভেম্বরে লাতিন আমেরিকা সফরে হাভানায় গিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেন, কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের পুরোনো বন্ধু কিউবা জৈব প্রযুক্তিতে যে উন্নতি করেছে, তা দেখে তিনি মুগ্ধ।

নিজস্ব টিকা তৈরির প্রচেষ্টার পাশাপাশি কোভ্যাক্স কর্মসূচিতেও যুক্ত হয়েছে ইরান। কোভ্যাক্স-কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি। কোভ্যাক্স একটি যৌথ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। এ উদ্যোগের যৌথ নেতৃত্বে আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপআই) ও দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি)। কোভ্যাক্স উদ্যোগের লক্ষ্য ধনী-গরিব দেশনির্বিশেষে করোনার টিকার ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করা।

কিউবা অবশ্য বাইরের কোনো দেশ থেকে টিকা আমদানির কথা কখনো বলেনি। তারা নিজস্ব টিকা দিয়েই এ বছরের প্রথমার্ধ থেকে কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে টিকাদান কর্মসূচি করার লক্ষ্য স্থির করেছে।