গাড়িতে চড়িয়া হাতি ব্রাজিলে চলিল...

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নাম তার ‘মারা’। বয়স হয়েছে বেশ। ভারতে জন্ম, সেখান থেকে আর্জেন্টিনা। কম তো ঘোরেনি মারা! সার্কাসে খেলা দেখিয়েছে জীবনের পরিণত সময়গুলোতে। এর পর ঠাঁই হয়েছিল চিড়িয়াখানায়। জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তাই শৃঙ্খলিত অবস্থাতে কাটাতে হয়েছে তাকে। তবে এবার কিছুটা স্বস্তি মিলেছে মারার জীবনে। এসেছে মুক্তির সুবাতাস।

মারা একটি হাতির নাম। বয়স ৫০ বছর। গত মার্চ মাসে মারাকে আর্জেন্টিনার চিড়িয়াখানা থেকে ব্রাজিলের একটি অভয়ারণ্যে পাঠানো হয়েছে। এর আগে এক সার্কাসে নিজের প্রশিক্ষককে খুন করায় মারার নামের আগে ‘খুনি’ তকমা বসে গিয়েছিল। সেই থেকেই এটাকে অভয়ারণ্যে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। অবশেষে করোনা মহামারির মধ্যেই শুরু হয় ‘মারা’-কে ব্রাজিল নিয়ে যাওয়ার মিশন। এ নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

আর্জেন্টিনার যে চিড়িয়াখানায় মারা-কে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে বেশির ভাগ প্রাণিকেই অন্যান্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। চিড়িয়াখানাটিকে এখন ‘ইকো পার্ক’-এ রূপান্তরের কাজ চলছে। এই কারণেই চিড়িয়াখানার সব প্রাণীকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। মারাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্রাজিলে হাতিদের জন্য তৈরি একটি অভয়ারণ্যে। কিন্তু মারাকে নিয়ে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরের সেই অভয়ারণ্যে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল অনেক। একে তো ভ্রমণের পুরোটাই ছিল সড়কপথে। অন্যদিকে ছিল করোনা মহামারির ছোবল। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সীমান্ত ছিল পুরোপুরি বন্ধ। এর মধ্যেই বিশাল বড় খাঁচাযুক্ত যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় মারা নামের হাতিটিকে। পুরো ভ্রমণে মানুষ ছিল মোটে ৪ জন।

তবে সবচেয়ে কঠিন ছিল চিড়িয়াখানা থেকে বিশেষ গাড়িতে মারাকে তোলা। ১৯৯৫ সাল থেকেই ওই চিড়িয়াখানায় মারার বাস। এর আগেই ঘটে গিয়েছিল এক সার্কাসে প্রশিক্ষককে হত্যার ঘটনা। ফলে মারাকে ভয় পাওয়াটা দোষের কিছু ছিল না। এর চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল নতুন করোনাভাইরাস। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বুঝে উঠতে পারছিল না যে, আসলেই দুই দেশের সরকার মহামারির মধ্যে হাতি স্থানান্তরের কাজে সহযোগিতা করবে কি না। অবশ্য দুই সরকার ভাইরাস ঠেকানোর সঙ্গে সঙ্গে এই কাজেও সহযোগিতা করেছিল বেশ। আর তাতেই সম্পন্ন হয় মারার আর্জেন্টিনা থেকে ব্রাজিল যাত্রা।

ব্রাজিলের অভয়ারণ্যে পৌঁছেই অবশ্য সেখানকার ‘রানা’ নামের একটি এশীয় হাতির সঙ্গে সখ্য জমে যায় মারার। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছিলেন যে, এত দিনের শৃঙ্খলিত জীবন ছেড়ে হুট করে অভয়ারণ্যে হয়তো খাপ খাওয়াতে পারবে না মারা। কিন্তু রানার সঙ্গে মারার সখ্য ছিল দারুণ। তবে কি মুক্ত জীবনের জন্যই উতলা হয়ে উঠেছিল মারা? হয়তোবা। কাঁহাতক আর চার দেয়ালে বন্দী থাকা যায়! শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ব্রাজিলের অভয়ারণ্যে সানন্দেই দিন কাটছে মারার।