‘দম বন্ধ হয়ে আসছে ব্রাজিলের’

ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমিতের সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখের বেশি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের শুরুর দিকের ঘটনা। ব্রাজিলের বনভূমি–অধ্যুষিত মানাউস শহর করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। শহরটির হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। সেখানকার সংকটের প্রাণঘাতী পরিণতি বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। দুই মাসের ব্যবধানে করোনা মহামারির ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে অক্সিজেন-সংকট ব্রাজিলের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার আল-জাজিরা অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মার্চ মাসে ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতির এতই অবনতি হয়েছে যে একে বিপর্যয়কর অবস্থা বলা হচ্ছে।

করোনার নতুন ধরনের অপ্রতিরোধ্য বিস্তারে ব্রাজিলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। করোনার সংক্রমণের মুখে মানাউসে অক্সিজেনের যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এখন দেশটির অন্যত্রও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমিতের সংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখের বেশি।

দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৯০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ২ হাজার ২০০ জন। তার আগে গত ২৩ মার্চ দেশটিতে সংক্রমিত হন প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ। মারা যান ৩ হাজার ১০০ জনের মতো।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির মহামারিবিদ জেসেম ওরেলানা আল–জাজিরাকে বলেন, পর্যাপ্ত অক্সিজেন, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির মুখে ব্রাজিলের হাসপাতালগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে।

ওরেলানা বলেন, ‘আলামত খুবই স্পষ্ট। আজ পুরো দেশই মানাউস হতে যাচ্ছে।’

ব্রাজিলের এই মহামারিবিদের তথ্যমতে, দেশটিতে নতুন সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। করোনায় সংক্রমিত গুরুতর রোগীদেরই চিকিৎসা দিতেই হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অক্সিজেন, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফুরিয়ে যাচ্ছে।

ব্রাজিলের ২৬টি রাজ্য ও ফেডারেল জেলার মধ্যে প্রায় সবগুলোর নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) ইতিমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত করোনা রোগীতে ঠাসা। শুধু তা-ই নয়, শয্যার অভাবে রোগীরা হাসপাতালের মেঝেতে মারা যাচ্ছেন বলেও খবর আসছে। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় অক্সিজেনের অপ্রতুলতার কারণেও করোনা রোগীরা মারা যাচ্ছেন।

দেশটির ক্যাম্পো বোম শহরের একটি হাসপাতালে গত শুক্রবারই ছয়জন করোনা রোগী অক্সিজেনসংশ্লিষ্ট কারণে মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরিস্থিতিকে আতঙ্কজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সংকটজনক পরিস্থিতিতে সহায়তা চেয়ে চিকিৎসকদের আকুল আর্তি পর্যন্ত জানাতে দেখা গেছে।

ওই হাসপাতালটির কর্মকর্তা ল্যাননেস ওসোরিও বলেন, অক্সিজেনের সমস্যা শুধু কোনো একটি হাসপাতাল বা রাজ্যের বিষয় না। এটি এখন ব্রাজিলের জাতীয় সমস্যা।

ব্রাজিলে অক্সিজেনের সরবরাহ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত সংকটজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির শিল্প গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি আইবিজির প্রেসিডেন্ট নিউটন ডি অলিভিরা।

গত সপ্তাহে ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ ও ব্রাজিলিয়ান কেমিক্যাল চেম্বার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য সংস্থাকে অক্সিজেন সরবরাহ বিষয়ে সতর্ক করে। তারা বলে, অক্সিজেনের সরবরাহ ২০ দিনের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ব্রাজিলে করোনা রোগী ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় দেশটিতে আরও আগেই অক্সিজেন ফুরিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তার ১০ শতাংশ ব্রাজিলের। করোনায় মারাত্মকভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটিতে টিকাদানের কার্যক্রমের গতিও বেশ ধীর।