ব্রাজিলে লকডাউন ঘোষণা নিয়ে মুখোমুখি প্রেসিডেন্ট ও গভর্নর

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো
এএফপি ফাইল ছবি

ব্রাজিলে হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত সপ্তাহে দেশটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। অবস্থা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতালগুলো। বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নররা করোনা ঠেকাতে লকডাউনকেই অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ব্রাজিলের ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। যেসব রাজ্য লকডাউন দিচ্ছে তাদেরকে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া জরুরি মহামারি সহায়তা বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যেই ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলায় স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন সেখানকার গভর্নর ইবানেইস রোকা। তবে দোকান, ফার্মেসি, গ্যাস স্টেশন, চার্চ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কার্যক্রমের মতো জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই লকডাউনের বাইরে থাকবে। রেস্তোরাঁ, পানশালা, বিনোদনের জায়গাগুলো বন্ধ থাকবে।

স্থানীয় সময় আগামীকাল রোববার সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর হবে বলে ঘোষণায় বলা হয়।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃতের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয়। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের দিক থেকে ব্রাজিল বিশ্বে ৩ নম্বরে আছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্রাসিলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর ব্রাসিলায় হাসপাতালগুলোর ৮০ শতাংশ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রোগী ভর্তি আছেন। দেশটির বেশ কিছু শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সেসব এলাকায় লকডাউন জারি হয়েছে আগে থেকেই। অনেক এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো লকডাউনের বিরোধিতা করে বলেন, গভর্নরদের লকডাউনের কারণে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক সফরে তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন আর ঘরে বসে থাকতে চান না। মানুষ তাঁদের কাজে ফিরতে চান।

প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের এক দিন আগেই ব্রাজিলে ১ হাজার ৫৪১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এটি ব্রাজিলে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

শুরু থেকে কোভিড-১৯–কে ‘সামান্য জ্বর’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো। সংক্রমণ ঠেকাতে কোনোরকমের টিকা নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সময়মতো করোনার টিকা সরবরাহে ব্যর্থ হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে তাঁর সরকার। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ করোনার টিকা পেয়েছেন।