‘স্বৈরাচারী সরকারের প্রচারমাধ্যমে পরিণত হয়েছে ফেসবুক’
ভিয়েতনামের স্বৈরাচারী সরকারের প্রচারমাধ্যমে পরিণত হয়েছে ফেসবুক—বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে মঙ্গলবার এমনটাই মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন অধিকারকর্মী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ পোস্ট সরিয়ে ফেলতে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ—এমন খবর প্রকাশের পর মন্তব্যটি করেন তিনি।
ভিয়েতনামে স্বৈরতন্ত্র সরকারের অধীনে স্বাধীন সব গণমাধ্যম বন্ধ করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাকটিভিস্টদের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয় ফেসবুক। তবে সেখানেও সরকারের সমালোচকদের টার্গেট শুরু করলে চাপে পড়ে সরকার।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে ভিয়েতনামের প্রভাবশালী ব্লগার হুইন নক চেন এএফপিকে বলেন, ‘ফেসবুক বাক্স্বাধীনতা খর্ব করার পাশাপাশি অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছে। এখন তা ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারমাধ্যমে পরিণত হয়েছে।’
সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে কোনো কনটেন্ট অবৈধ মনে হলে প্ল্যাটফর্ম থেকে সেগুলো মুছে ফেলা হয় বলে গত বছরই স্বীকার করেছে ফেসবুক। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজারে নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় হ্যানয়ের দাবি মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাকারবার্গ নিজে।
এ ব্যাপারে এএফপি জানতে চাইলে ফেসবুক মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বলেছেন, ‘লাখো মানুষের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ভিয়েতনামে বেশ কিছু কনটেন্ট নিষিদ্ধ করেছে।
ভিয়েতনামে ৫ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি।
চেন বলেছেন, ফেসবুকের ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড’ লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে প্রতিবার এক মাস করে মোট দুবার তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কোন পোস্টে সমস্যা ছিল, তা উল্লেখ করেনি ফেসবুক। সরকারের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার সমালোচনা করে দেওয়া দুটি পোস্ট মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার অ্যাকটিভিস্ট ও সংগীতজ্ঞ এনগুয়েন তুয়ান কান এএফপিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা যে মূল্যবোধ ধারণ করে, এর চেয়ে ফেসবুকের কাছে মুনাফা বড় দেখে ভিয়েতনামে অনেকেই খুব হতাশ হয়েছেন।
এনগুয়েন তুয়ান কান বলেন, ‘আন্দোলনকর্মীরা ফেসবুকের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারণাকে ছড়িয়ে দেন, অনেক আন্দোলন সংগঠিত করা হয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে।
তবে একদিন আমরা বুঝতে পারলাম, সত্যিই গলা চেপে ধরতে ভিয়েতনামের পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করছে ফেসবুক। এখন অনেকেই কেবল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখছেন ফেসবুককে।’
গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে বলেছিল, ভিয়েতমানে ফেসবুক ও গুগল দ্রুত ‘মানবাধিকারকর্মীশূন্য’ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফেসবুকের কাছে আয়ের দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভিয়েতনাম বলেও জানানো হয়েছিল সে প্রতিবেদনে।