হন্ডুরাস থেকে ৯ হাজার মানুষের কাফেলা যুক্তরাষ্ট্রের পথে

হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। গুয়াতেমালা সীমান্তে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে নিরাপত্তা বাহিনীছবি: রয়টার্স

হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী মানুষের স্রোত প্রবল হচ্ছে। গুয়াতেমালা সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী হন্ডুরাসের কয়েক শ অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীর একটি কাফেলার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অভিবাসীদের এ মিছিল ঠেকাতে সীমান্তের ভাদো হোন্ডো গ্রামের রাস্তায় পাহারা বসিয়েছে গুয়াতেমালার পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, গুয়াতেমালা অভিবাসন সংস্থার সরবরাহ করা ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক শ অভিবাসী নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। নিরাপত্তা বাহিনী অনেককে ফেরত পাঠাতে পারলেও কেউ কেউ তাদের ঠেলে পালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হওয়া মানুষজনের আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাগত জানাবেন।

গুয়াতেমালা অভিবাসন সংস্থার মুখপাত্র আলেজান্দ্রা মিনা বলেন, একটি ছোট দল বাধা পার হয়ে চলে গেছে। বাকিদের আটক করা হয়েছে। যারা বের হয়ে গেছে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে।

হন্ডুরাসের এসব অভিবাসী হেঁটে গুয়াতেমালা পার হয়ে মেক্সিকোর দিকে যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই সহিংসতা এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সাম্প্রতিক মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের শিকার।

গুয়াতেমালার সরকার বলছে, গত শুক্রবার থেকে প্রায় ৯ হাজার অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থী তাদের দেশে ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার ছয় হাজার জন সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পার হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই করোনা নেগেটিভ পরীক্ষার প্রমাণ দেয়নি। গুয়াতেমালায় ঢুকতে এ সনদ জরুরি। বাকি তিন হাজার অভিবাসী শনিবার সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

গুয়াতেমালা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শত শত অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের দিকে রওনা দিয়েছে
ছবি : রয়টার্স

গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো গিয়ামাতেই এক বিবৃতিতে হন্ডুরাস কর্তৃপক্ষকে তাদের জনগণের ঢল নিয়ন্ত্রণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হওয়া মানুষজনের আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাগত জানাবেন। বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন বাইডেন।

তিনি একটি সুষ্ঠু ও মানবিক অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থার দায়িত্বরত কমিশনার মার্ক মরগ্যান আশ্রয়প্রার্থীদের গত সপ্তাহে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আপনাদের সময় ও অর্থ নষ্ট করবেন না। প্রশাসন পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রভাবিত হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-সীমান্ত দিয়ে আসা অভিবাসীদের ঢল বন্ধ করার জন্য গুয়াতেমালা, মেক্সিকো ও হন্ডুরাস ইতিমধ্যে চুক্তি করেছে এবং সীমান্তে কাফেলা ঠেকাতে হাজারো সেনা, দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করেছে।

পথে জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শরণার্থী ও অভিবাসীরা। তাদের সঙ্গে শিশুরাও আছে
ছবি : রয়টার্স

গত শনিবার মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে গুয়াতেমালা সরকারের দৃঢ় ও দায়িত্বশীল আচরণের প্রশংসা করেছেন এবং হন্ডুরাসকে অভিবাসীর ঢল ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুটি ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সন্তানদের খাওয়ানোর মতো কিছুই নেই। তাঁর মতো হাজারো মানুষকে রাস্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তাই পথে জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেসাস পাজ, শরণার্থী

মেক্সিকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিশীল এবং তবে যেকোনো ধরনের অননুমোদিত প্রবেশের বিরোধিতা করবে।

গত শুক্রবার গুয়াতেমালার সেনাবাহিনী শত শত মানুষকে আটক করে, যার মধ্যে অনেক পরিবারের সঙ্গে শিশু রয়েছে। হন্ডুরাসে খাবার ও গৃহহীন হয়ে পড়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী কাফেলায় যুক্ত হচ্ছে। চার সন্তানের মা মারিয়া জেসাস পাজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গত নভেম্বরে মধ্য আমেরিকায় আঘাত হানা দুটি ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সন্তানদের খাওয়ানোর মতো কিছুই নেই। তাঁর মতো হাজারো মানুষকে রাস্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তাই পথে জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অধিকাংশ অভিবাসীকে স্যান্ডেল পায়ে, অল্প জিনিসপত্র ভরা ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখা গেছে।

এদোয়ার্দো ল্যানজা (২৮) বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাঁর এমন একটি দেশে বাস করার স্বপ্ন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ মর্যাদার সঙ্গে, সম্মানের সঙ্গে বাস করতে পারবে। চাকরির একটা সুযোগ হবে।

গুয়াতেমালার নিরাপত্তা বাহিনী অভিবাসী ঢল ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে
ছবি : রয়টার্স

কাফেলার আরেক সদস্য নর্মা পিনেদা (৫১) বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে তিনি রাস্তায় জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হন্ডুরাস ছেড়ে যাচ্ছি, কারণ এখানে কোনো কাজ নেই। সরকারি কোনো সাহায্য নেই। আমাদের খাবার, পোশাক দরকার।’

শুক্রবার রেডক্রসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্য আমেরিকায় কোভিড মহামারির সঙ্গে সামাজিক বৈষম্য, সহিংসতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ একসঙ্গে দেখা দিয়েছে। এতে সেখানে নতুন মানবিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে হাজারো অভিবাসী হন্ডুরাস ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে যাত্রা করেছেন। কিন্তু সবাইকে মার্কিন সীমান্তরক্ষীর মুখোমুখি হতে হয়েছে। গত শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো সীমান্তে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবিক সংকট নিরসন, বেআইনি অভিবাসন এবং মাদক ও অপরাধীদের ঢল নিয়ন্ত্রণে আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।