শেষ মুহূর্তে কাতার ফ্লাইট বন্ধ করায় ‘মন ভেঙেছে’ মরোক্কান সমর্থকদের

বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় স্পেনের বিপক্ষে মরক্কোর ম্যাচের আগে কাতারের আল রায়ানে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বসিত মরক্কো সমর্থকেরা। ৬ ডিসেম্বর, ২০২২
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মরক্কোর ফুটবলারদের লড়াই দেখতে কাতারে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কয়েক শ মরোক্কান। খেলা দেখার টিকিট–বিমান সবই ঠিক হয়ে ছিল। কিন্তু বুধবার এই ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁদের এ যাত্রায় বাদ সেধেছে কাতার। কাতারের কর্মকর্তারা মরক্কোর ওই সব ফ্লাইট আসতে দিচ্ছে না।

সেমিফাইনালের এই ম্যাচ উপলক্ষে কাতারে সাতটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করেছিল মরক্কোর রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা রয়্যাল এয়ার মারোক। মরক্কোর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দেশের ফুটবল অনুরাগীদের বিনা মূল্যে ১৩ হাজার টিকিট দেওয়ার ঘোষণা দিলে ওই পরিকল্পনা করে বিমান পরিবহন সংস্থাটি।

কিন্তু কাতারের আপত্তিতে ফ্লাইট চালানো যাচ্ছে না জানিয়ে এয়ার মারোক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কাতারি কর্তৃপক্ষ বিধিনিষেধ আরোপ করায় রয়্যাল এয়ার মারোক গ্রাহকদের দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে কাতার এয়ারওয়েজের মাধ্যমে পরিচালিত তাদের ফ্লাইটগুলো বাতিল করতে হচ্ছে।’ কাতারের কর্মকর্তারা কেন বিমান পরিবহন সংস্থাটিকে ফ্লাইট বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে তা স্পষ্ট হয়নি।

শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানের টিকিট এবং কাতারে হোটেল কক্ষ ভাড়ার জন্য এরই মধ্যে পকেটের পয়সা খরচ করা মরক্কো ফুটবল–ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। মরক্কোর এয়ারলাইনসটি যাত্রীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি তাঁদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে মরক্কোর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বিনা মূল্যে টিকিট দেওয়ার ঘোষণায় অনেক প্রবাসী মরোক্কান কাতারে এসে হাজির হয়েছেন। প্রায় ৫০ লাখ মরোক্কান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তাঁদের অনেকে ফ্রান্সেও থাকেন।

মরক্কোর সমর্থকেরা কাতারের আল জয়নাব স্টেডিয়ামের ‘ফ্যান সেন্টারে’ হাজির হয়ে মাথায় মরক্কোর পতাকা বাঁধছেন ও টুপি পরছেন রোদের তাপ থেকে বাঁচতে। মরক্কো ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী, বিনা মূল্যের টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা।

এই সমর্থকদের একজন জিনেব এনফাতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে এই ম্যাচ দেখতে এসেছেন। কিন্তু টিকিট আর তাঁর কপালে জোটেনি। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এই খেলার প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে—ফ্রান্সের বিপক্ষে মরক্কো খেলবে। আমি অর্ধেক ফ্রেঞ্চ, অর্ধেক মরোক্কান।’ টিকিট কেন পাওয়া যাচ্ছে না, সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

মরক্কোর এই সমর্থক বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে নিয়ে এসেছি। জানি না এখন আমরা কী করব। আমার মন ভেঙে গেছে।’

আফ্রিকার প্রথম কোনো দেশ হিসেবে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে এই পর্যায়ে এসেছে মরক্কো। এই লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখছেন ফুটবলবোদ্ধারা। তবে প্যারিসে বেড়ে ওঠা মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই বলেছেন, তাঁর খেলোয়াড়েরা আত্মবিশ্বাসী। আফ্রিকার কোনো দেশের বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ানোর জন্য আরও ৪০ বছর অপেক্ষা তাঁরা চান না।