এই ১০ নারী উদ্যোক্তা কী বানিয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন

নিজের একটি ব্যবসা দাঁড় করানো সহজ কথা নয়। এ জন্য একাগ্রচিত্তে কেবল বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে গেলেই হয় না, বরং চাই অতুলনীয় উদ্যোক্তা মনোভাব এবং সফলতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তবে কোনো নারী যদি একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে চান বা উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁকে এসব ছাড়াও আরও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

ব্যবসার জগৎ এখনো ‘বয়েজ ক্লাব’ হয়ে আছে। ব্যবসায় সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, যেটি এখনো পুরোপুরি পুরুষপ্রধান। ব্যবসার জন্য আর্থিক পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়েও নারীদের বেশির ভাগ সময় হতাশ হতে হয়। বিনিয়োগকারীরা একজন নারী উদ্যোক্তার ওপর যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারেন না। পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের অধিকাংশ চাপও নারীর ওপর থাকে।

তবে আশার কথা হলো, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীরা নতুন নতুন ব্যবসার উদ্যোগ নিচ্ছে এবং তাদের কেউ কেউ দারুণ সফলও হয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়া ১০ নারীকে নিয়ে ইএম৩৬০টেক ডটকম অবলম্বনে আজকের আয়োজন।

উইটনি উল্ফ হার্ড

বাম্বলের সিইও উইটনি উল্ফ হার্ড
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উইটনি উল্ফ হার্ড শুধু ইতিহাসের অন্যতম সফল নারী উদ্যোক্তাই নন, বরং তিনি এমন একজন, যিনি অনলাইন ডেটিংয়ের ধরনই পাল্টে দিয়েছেন। তিনি ‘বাম্বল’ নামের জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।

বাম্বল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ‘নারীরাই প্রথম পদক্ষেপ নেবে’ নীতির মাধ্যমে অনলাইন ডেটিংয়ের প্রচলিত ধারা বদলে দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাপে নারীর সম্মতি ছাড়া পুরুষেরা ‘নিষ্ক্রিয়’।

উইটনি উল্ফ হার্ড যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে কম বয়সে (৩১ বছর বয়সে) কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা প্রথম নারী এবং সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ নারী কোটিপতিতে পরিণত হন।

উইটনির নেতৃত্বে বাম্বল এখন ১০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যা শুধু ডেটিং নয় বরং বন্ধুত্বের জন্য ‘বাম্বল বিএফএফ’ এবং পেশাগত যোগাযোগের জন্য ‘বাম্বল বাজ’ নামেও সম্প্রসারিত হয়েছে।

বাম্বলের আগে উইটনি ছিলেন আরেক ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের সহপ্রতিষ্ঠাতা। সেখানে তিনি প্রাথমিক বিপণন ও ব্যবহারকারী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। যদিও পরে তিনি আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও বৈষম্যের অভিযোগে মামলা করে টিন্ডার ছেড়ে আসেন এবং নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাম্বল প্রতিষ্ঠা করেন।

বর্তমানে উইটনি নারী অধিকার রক্ষায় সরব এক কণ্ঠস্বর। তিনি তাঁর প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ ও সুস্থ অনলাইন যোগাযোগকে উৎসাহিত করেন। সবচেয়ে কম বয়সে কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা এবং নিজের যোগ্যতায় একজন কোটিপতি নারী হিসেবে তিনি নবীন নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।
 

মেলানি পার্কিন্স

ক্যানভারের অন্য দুই সহপ্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে মেলানি পার্কিন্স
ছবি: ক্যানভার সৌজন্যে

গ্রাফিক ডিজাইনকে সহজলভ্য করে বিশ্বব্যাপী বিপ্লব ঘটানোর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান অস্ট্রেলিয়ার কোটিপতি নারী উদ্যোক্তা মেলানি পার্কিন্স। তিনি ‘ক্যানভা’ নামে একটি ছোট্ট কোম্পানির মাধ্যমে এই কাজটি শুরু করেন।

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন পড়ার সময় মেলানি দেখতে পান, গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য প্রচলিত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা বেশ জটিল। তিনি এ বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, জন্ম হয় ক্যানভার।

এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা যা-ই হোক না কেন, তাঁকে পেশাদার ডিজাইনের মতো দেখতে ডিজাইন তৈরি করার সুযোগ করে দেয়। তিনি ২০১৩ সালে তাঁর সঙ্গী ক্লিফ অবরেখ্ত ও বন্ধু ক্যামেরন অ্যাডামসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন।

অস্ট্রেলিয়ান স্টার্টআপ হওয়ায় প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীরা ক্যানভার ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। কিন্তু ক্যানভার ব্যবহার বান্ধব ইন্টারফেস, ড্রাগ-অ্যান্ড-ড্রপ ফাংশন এবং বিস্তৃত টেমপ্লেট লাইব্রেরি দ্রুত এটিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
বর্তমানে মাসে ক্যানভার গড় ব্যবহারকারী ৬ কোটির বেশি। ইন্টেল ও জুমের মতো কোম্পানিগুলো এর পেইড প্ল্যান গ্রহণ করেছে।

মেলানি পার্কিন্স এমন একজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা যিনি একটি প্রযুক্তি স্টার্টআপকে ১ বিলিয়ন ডলারের মূল্যে পৌঁছে দিয়েছেন এবং আজ অস্ট্রেলিয়ার ধনী নারীদের মধ্যে একজন।

ক্যানভার বর্তমান আর্থিক মূল্যমান ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। এটি প্রযুক্তি জগতে একটি ‘ইউনিকর্ন’ কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

অ্যান বডেন

স্টারলিং ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অ্যান বডেন
ছবি: অ্যান বডেনের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

যুক্তরাজ্যের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক ‘স্টারলিং ব্যাংক’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যান বডেন। এটি সম্পূর্ণ মোবাইলভিত্তিক ব্যাংক এবং একেবারে শূন্য থেকে তৈরি।

ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে বডেন যুক্তরাজ্যে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তাঁর পটভূমি অন্যান্য ফিনটেক (প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবাদান) প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের মতো ছিল না।

অ্যালায়েড আইরিশ ব্যাংক এবং রয়্যাল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ডে উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যান বডেন। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার সময় তিনি প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো প্রত্যক্ষ করেন।

অ্যান বডেন কম্পিউটার সায়েন্সে লেখাপড়া করেছেন। নিজের এ পটভূমি থেকে তিনি অ্যাপভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার বাস্তব সুযোগ দেখতে পান।

সে সময়ের ফিনটেক স্টার্টআপগুলো সাধারণত দ্রুত বিস্তারের দিকে বেশি মনযোগ দিত। কিন্তু অ্যান বডেন সে পথে হাঁটেননি। স্টারলিং ব্যাংকের প্রথম দিনগুলোতে তিনি এটিকে একটি লাভজনক ও টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার দিকে অধিক গুরুত্ব দেন। তাঁর এই সাবধানে পা ফেলার কৌশল সফল হয়। স্টারলিং ব্যাংক একই সঙ্গে লাভজনক এবং গ্রাহকদের আস্থার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথ চলছে।

২০১৪ সাল থেকে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে স্টারলিং ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

আজ স্টারলিং ব্যাংক যুক্তরাজ্যে নারী উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলা মাত্র ছয়টি ‘ইউনিকর্ন’ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। যদিও অ্যান বডেন ২০২৩ সালের জুনে স্টারলিং ব্যাংকের সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে স্টারলিং এখনো তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে চলছে। তাঁর এই উদ্যোগ তাঁকে ইতিহাসের অন্যতম সফল নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।

কিরণ মজুমদার-শ

বায়োকনের চেয়ারম্যান কিরণ মজুমদার-শ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতে বায়োটেকনোলজির আরেক নাম কিরণ মজুমদার-শ। এই নারী উদ্যোক্তা কেবল ধনকুবের ব্যবসায়ী নন বরং একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি শূন্য থেকে শুরু করে লাইফ সায়েন্সে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

১৯৭৮ সালে মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে নিজের গ্যারেজে তিনি ‘বায়োকন’ শুরু করেছিলেন। বায়োকন এর যাত্রার শুরু হয় শিল্প এনজাইম তৈরির মধ্য দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে এটি ওষুধশিল্পে ব্যবসা প্রসারিত করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সাশ্রয়ী মূল্য এবং সহজলভ্যতা।

কিরণের নেতৃত্বে বায়োকন বায়োসিমিলারসের (জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করা। যেমন ইনসুলিন) ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বায়োকন আজ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। এটি সাশ্রয়ী মূল্যে ইনসুলিন এবং জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করে এবং বায়োসিমিলারস খাতে আধুনিক গবেষণা পরিচালনা করছে।

এ ছাড়া এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইনসুলিন ফ্যাক্টরি তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবায় কিরণের বায়োকন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

রেশমা সৌজানি

নিজের লেখা বই হাতে রেশমা সৌজানি
ছবি: রেশমা সৌজানির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

রেশমা সৌজানি ‘গার্ল হু কোড’–এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রযুক্তি জগতে তাঁর সাফল্যের পথটি অন্যদের থেকে আলাদা। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকে যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছেন, সেখানে সৌজানির আগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষমতায়ন।

রেশমা ইয়েল ল স্কুল থেকে স্নাতক পাস করার পর শুরুতে আইন ও রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়েন। প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী হিসেবে ২০১০ সালে কংগ্রেসের নির্বাচনে প্রার্থী হন সৌজানি। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে অধিকার সমর্থন এবং সামাজিক পরিবর্তনের গুরুত্ব শেখায়।

প্রযুক্তি খাতে নারীর অভাব পূরণ করতে ‘গার্ল হু কোড’ কাজ করে। সৌজানির এই প্রতিষ্ঠান আজ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সব কটিতে এবং ২০টির বেশি দেশে সাড়ে ৪ লাখের বেশি মেয়েশিশুর কাছে পৌঁছে গেছে।

সংগঠনটি ফ্রি কোডিং প্রোগ্রাম, আফটার-স্কুল ক্লাব এবং ওয়ার্কশপ আয়োজন করে, যা মেয়েশিশুদের প্রযুক্তির অভাবনীয় জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

সৌজানির কাজ কেবল মেয়েদের কোডিং শেখানো নয়, বরং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ক্ষেত্র হিসেবেও তাঁর কোম্পানি কাজ করে। তিনি মেয়েদের ঝুঁকি নিতে এবং ব্যর্থতাকে ভয় না পেতে উৎসাহ দেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রযুক্তি খাতে নতুন প্রজন্মের আত্মবিশ্বাসী নারী নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

রেশমা সৌজানির সাফল্যকে তাই আর্থিক লাভের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় না বরং নারীদের ওপর তাঁর ইতিবাচক প্রভাব দিয়ে তাঁর মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। কারণ, তিনি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যা প্রযুক্তি জগতে বাস্তব পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

শেরিল স্যান্ডবার্গ

মেটার সাবেক চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মেটার সাবেক চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ প্রযুক্তি জগতে চেনা নাম। তিনি কেবল একজন অত্যন্ত সফল নারী উদ্যোক্তাই নন বরং একজন প্রভাবশালী লেখক এবং নারী নেতৃত্বের সমর্থক।

শেরিল ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মেটার সিওও ছিলেন। তিনি ‘লিনইন ডট ওআরজি’–এর প্রতিষ্ঠাতা। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে।

শেরিল দুটি সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের লেখক। প্রযুক্তি জগতে শীর্ষস্থানীয় নারী হিসেবে ৫৬ বছর বয়সী স্যান্ডবার্গ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম করেছেন। তাঁর সাফল্যের গল্প নারীদের জন্য শক্তিশালী প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

সুজান ওজসিকি

গত বছর ৯ আগস্ট সুজান ওজসিকি মারা যান
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউটিউবের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুজান ওজসিকি প্রযুক্তি জগতের প্রসিদ্ধ নারী উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব পালন করেছেন।

শুধু ইউটিউব নয়, বরং তারও আগে গুগলের আজকের অবস্থানে উঠে আসার পেছনেও সুজানের বড় ভূমিকা ছিল। ১৯৯৮ সালে সুজান ওজসিকির গ্যারেজটি ছিল গুগলের প্রথম অফিস। তিনি গুগলের ১৬তম কর্মী।

২০০৬ সালে ১৬৫ কোটি ডলারে ইউটিউব কিনে নেয় গুগল, এ সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সুজান ওজসিকির। তিনি ইউটিউবের ভেতর ভবিষ্যৎ ব্যবসার সম্ভাবনা দেখেছিলেন এবং সিইও হিসেবে প্ল্যাটফর্মটিকে অনলাইন ভিডিও কনটেন্টের একটি প্রভাবশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন।

সুজান কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য সৃজনশীল পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের সুযোগও করে দেন। ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট সুজান ওজসিকি মারা যান।

গুয়ান ডিয়ান

প্যাটসন্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা গুয়ান ডিয়ান
ছবি: লিংকডইন

গুয়ান ডিয়ান ‘প্যাটসন্যাপ’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এবং মেশিন লার্নিংয়ে চালিত গবেষণা ও উন্নয়ন বিশ্লেষণ প্রদানকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ২০০৭ সালে একটি ছোট দল নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান ডিয়ানের নেতৃত্বে দ্রুত উন্নতি করে এবং পেটেন্ট বিশ্লেষণে একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে পরিণত হয়।

এই প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের বাজার, নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং প্রতিযোগীদের সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য প্রদান করে, যেন তাঁরা সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বর্তমানে ডিয়ান প্যাটসন্যাপের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্যাটসন্যাপ বিশ্বব্যাপী ১২ হাজারের বেশি গ্রাহককে সেবা দান করছে, যার মধ্যে নাসা, আইবিএম এবং লেগোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

বাজারের নির্দিষ্ট চাহিদার প্রতি মনোযোগ, সম্পর্ক গড়ার দক্ষতা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা তাঁকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অ্যান ওজসিকি

অ্যান ওজসিকির নেতৃত্বে ‘২৩অ্যান্ডমি’ সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জিন পরীক্ষাকে সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে
ছবির: রয়টার্স

অ্যান ওজসিকি ‘২৩অ্যান্ডমি’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এটি একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জিনোমিক্স কোম্পানি। ‘২৩অ্যান্ডমি’–এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। এটি সরাসরি গ্রাহকদের জিনগত পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের সুযোগ দেয়। এই পরিষেবার মাধ্যমে  একজন ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষ  বা বংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারে।

ওজসিকির নেতৃত্বে ‘২৩অ্যান্ডমি’ সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ীমূল্যে জিন পরীক্ষাকে সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে।

এ ছাড়া কোম্পানির কাছে যে পরিমাণে জিনগত তথ্য জমা আছে চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং নতুন নতুন ওষুধ তৈরিসহ বিভিন্ন গবেষণা কাজে তা দারুণভাবে সহায়তা করতে পারবে।

১০

সারা হলি

সারা হলি অনেক অলাভজনক মানবহিতৈষী কাজে জড়িত সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত আছেন
ছবি: লিংকডইন

সফল নারী উদ্যোক্তা সারা হলি ২০০৯ সাল থেকে আটটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে তিনি কয়েক লাখ ডলারের মুনাফা লাভ করেছেন। তিনি ‘গ্রো মাই টিম’ গড়ে তুলতে সহায়তা করেন। এটি একটি অত্যন্ত সফল নিয়োগ কোম্পানি, যারা সারা বিশ্ব থেকে কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া এবং দূর থেকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকরভাবে সংযুক্ত করে।

তবে সারা হলি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান ‘গ্রোমোটলি’  দিয়ে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সিইও। গ্রোমোটলি একটি ‘গ্লোবাল রিমোট-ওয়ার্ক প্ল্যাটফর্ম’, এটি প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থেকেও পেশাজীবীদের কাজের সুযোগ ও সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করে।

সারা হলি আইএফএ থট লিডার অব দ্য ইয়ার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ ছাড়া ‘দ্য এজ’ তাঁকে মেলবোর্নের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী, প্রেরণাদায়ক ও সৃজনশীল নাগরিক নির্বাচিত করেছে। ব্যবসা ছাড়াও তিনি নিজেকে অনেক অলাভজনক মানবহিতৈষী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সংযুক্ত রেখেছেন।