বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হলে মানবেন না বিক্ষোভকারীরা

আগামী বুধবার পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাভুটি হবে। প্রার্থী হিসেবে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

রনিল বিক্রমাসিংহে
ফাইল ছবি: এএফপি

শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভের ১০০ দিন পূর্ণ হলো গতকাল রোববার। এ সময়ের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে গতকাল পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত ছিল।

ক্ষমতাসীন দল ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। তাঁরা বলছেন, বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হলে তাঁরা মানবেন না।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। বিক্রমাসিংহে ছাড়া বাকি তিন প্রার্থী হলেন বিরোধী দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েক ও সাবেক মন্ত্রী ডালাস আলাহাপপেরুমা।

আগামী বুধবার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাভুটি হবে। প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে আগ্রহীদের আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

আন্দোলনের কর্মী প্রসাদ ওয়েলিকুম্বুরা বলেন, বিক্রমাসিংহেকেও চলে যেতে হবে। গতকাল এক টুইটে তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভ শুরুর ১০০ দিন পূর্ণ হলো। কিন্তু এখনো সরকারব্যবস্থার কোনো স্থায়ী পরিবর্তন দেখা গেল না।’

জিবানথা পেইরিস নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা বিক্রমাসিংহেকে মেনে নিতে পারি না। আমরা আর কোনো দুর্নীতিবাজ নেতাকে চাই না। আমরা পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই।’

প্রসাদ ওয়েলিকুম্বুরা ও জিবানথা পেইরিসের মতো বিক্ষোভকারীরা গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েছিলেন। এর ফলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর পৌঁছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য তাঁর অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়।

গত বছরের শেষ দিক থেকে দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা তীব্র হতে শুরু করে। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের চরম সংকটে পড়ে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে ক্ষমতা থেকে সরাতে শুরু হয় বিক্ষোভ। ফেসবুক, টুইটার ও টিকটক প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্ষোভের শুরু। জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে একত্র হন। ক্ষমতাধর রাজাপক্ষে সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিদের সঙ্গে যোগ দেন অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে বিপদে পড়া সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলমানরা।

গত ৯ এপ্রিল গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। হাজারো বিক্ষোভকারী তাঁর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। আয়োজনকারীরা যতটা সাড়া পাবেন বলে আশা করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেন।

গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে বিক্ষোভকারীরা রাজাপক্ষে পরিবারের অনুগত মনে করেন। রাজাপক্ষে পরিবারের চার ভাই বছরের পর বছর ধরে দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে ছিলেন।

বিক্ষোভের মুখে গত ৯ মে গোতাবায়া রাজাপক্ষের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী করেন গোতাবায়া। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছয়বার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এখন পার্লামেন্টে তাঁর দলের মাত্র একটি আসন আছে।

বিক্ষোভকারীরা যখন সুরক্ষিত গোতাবায়ার বাসস্থান ২০০ বছরের পুরোনো প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে পড়েন, তখন তাঁরা প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত ভবনও জ্বালিয়ে দেন। দেশটির ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে রাজাপক্ষেদের এসএলপিপি পার্টির ১০০ জনের বেশি সংসদ সদস্য রয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এখন বিক্ষোভ আয়োজনে যুক্ত আরাগালায়া গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হবে।’

গোতাবায়ার পদত্যাগের পর বিক্ষোভ থেকে কিছুটা সরে এসেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা দখলে থাকা তিনটি প্রধান রাষ্ট্রীয় ভবন খালি করে দিয়েছেন। বিক্রমাসিংহে সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার, তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোটের আগে সংসদের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করতে সোমবার থেকে রাজধানীতে অতিরিক্ত সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে।