অন-অভিবাসী ভিসার আবেদনের নিয়ম

কোনো বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে সর্বপ্রথম অন-অভিবাসী ভিসা পেতে হবে। তবে ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের মাধ্যমে যোগ্যতা পূরণকারী দেশের নাগরিকেরা ভিসা ছাড়াই আমেরিকায় আসতে পারেন।
তবে যারা ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের অধীনে আমেরিকায় আসছেন তাঁদের অবশ্যই ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইএসটিএ) সিস্টেম থেকে অনুমোদন নিতে হবে। যদি কেউ ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের জন্য যোগ্যতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, যদি শিক্ষা বা কর্মসূত্রে বা কোনো বিনিময় প্রোগ্রামে অংশ নিতে আসে বা অন্য যেকোনো উদ্দেশ্যে আসে যা বি-ওয়ান/বি-টু ভিসা উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়, সে ক্ষেত্রে একটি অন-অভিবাসী ভিসার প্রয়োজন হবে। পর্যটক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী বা যারা কোনো কাজ করতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমেরিকায় যেতে চান তাঁরাই মূলত অন-অভিবাসী ভিসা ব্যবহার করেন।
একনজরে ব্যবসায়িক/পর্যটন ভিসা
ব্যবসা, বিনোদন বা চিকিৎসার কারণে যারা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান তাঁদের জন্য বি-১/বি-২ ভিসা। যারা ব্যবসা-সংক্রান্ত আলোচনা, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাগত, পেশাদারি বা ব্যবসায়িক আলোচনা ও বৈঠকে উপস্থিত হতে বা কোনো চুক্তি সম্পাদনের জন্য আমেরিকায় যেতে চান তাঁদের জন্যই মূলত বি-১ ভিসা। আর যারা বিনোদনমূলক যেমন—পর্যটন, বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা, চিকিৎসা এবং সামাজিক বা সেবামূলক কাজে যেতে চান তাঁদের জন্য বি-২ ভিসা প্রযোজ্য। প্রায় সময় বি-১ ও বি-২ ভিসা দুটিকে সম্মিলিতভাবে বি-১/বি-২ ভিসা হিসেবে দেওয়া হয়।
যোগ্যতা
বি-১/বি-২ ভিসার জন্য আবেদন করলে কনস্যুলার অফিসারকে দেখাতে হবে যে, আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট (আইএনএ) অনুসারে ভিসা পাওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে যেসব বিষয় দেখাতে হবে সেগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রার উদ্দেশ্য সাময়িক কালের জন্য। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরিকল্পনা। যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য খরচ বহন করার সামর্থ্যের প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও নাগরিকত্ব আছে এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন যা নিশ্চিত করে যাত্রা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করা হবে।
আবেদনের জন্য যা প্রয়োজন
ব্যবসা বা পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করতে যা যা লাগবে সেগুলো হলো—অন-অভিবাসী ভিসা ইলেকট্রনিক আবেদনপত্র (ডিএস-১৬০) ফরম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট। যদি পাসপোর্টে একাধিক ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকেন তাহলে যারা ভিসা চাইছেন তাদের প্রত্যেককে আবেদন জমা দিতে হবে ও তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট থাকতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে তোলা (৫ সেমিX৫ সেমি) এক কপি ছবি। অন-অভিবাসী ভিসা প্রক্রিয়ার অফেরতযোগ্য ফি ১৬০ ডলার জমা দেওয়ার রসিদ। ভিসা দেওয়া হলে জাতীয়তার ওপর নির্ভর করে একটি অতিরিক্ত ভিসা ইস্যুয়েন্স রেসিপ্রোসিটি মূল্য প্রদান করতে হতে পারে। সাক্ষাৎকারের লেটার দিতে হবে।
যেভাবে আবেদন করতে হবে
নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা ইলেকট্রনিক আবেদনপত্র (ডিএস-১৬০) ফরম পূরণ করতে হবে। ভিসা আবেদনপত্র প্রক্রিয়ার ফি দিতে হবে। ওয়েবপেজে সাক্ষাৎকারের দিন নির্ধারণ করতে হবে। সাক্ষাৎকারের তারিখ ও সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে দেখা করতে হবে। সাক্ষাৎকারের চিঠির একটি প্রিন্ট কপি, ডিএস-১৬০ কনফরমেশন পেজ, এক কপি ছবি ও পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কেউ নকল কাগজপত্র দিলে জালিয়াতি বা ভুল তথ্যের কারণে ভিসার জন্য তিনি সারা জীবন অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।
কোনো সহায়ক কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে ফ্যাক্স বা ইমেইল করা যাবে না। সাক্ষাৎকারের সময় যেসব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে সেগুলো হলো—আয়, কর প্রদান, বাসস্থান বা ব্যবসার মালিকানা বা সম্পত্তির বর্তমান প্রমাণ। ভ্রমণের যাত্রাপথ বা পরিকল্পিত যাত্রার অন্যান্য বিশ্লেষণ। নিয়োগকারী সংস্থার দেওয়া পত্র যেখানে পদ, বেতন, কত দিন থেকে চাকরি করা হচ্ছে, যেকোনো অনুমোদিত ভ্রমণ এবং যদি যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রার কোনো অফিসিয়াল উদ্দেশ্য থাকে তাও উল্লেখ থাকবে। গ্রেপ্তার বা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এবং পরে মার্জনা পেলে সে ক্ষেত্রে অপরাধী/আদালতের নথি।
এ ছাড়া যাত্রার উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে আরও যা সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে সেগুলো হলো—ছাত্র হলে সাম্প্রতিক বিদ্যালয়ের ফলাফল, নম্বরপত্র, ডিগ্রি/ডিপ্লোমা। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রমাণ যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফিক্সড ডিপোজিটের স্লিপ। কর্মরত প্রাপ্তবয়স্ক বা চাকরিজীবী হলে নিয়োগকারী সংস্থার নিয়োগপত্র এবং গত তিন মাসের বেতনের প্রমাণপত্র। ব্যবসায়ী বা কোম্পানির পরিচালক হলে সংস্থায় পদ ও উপার্জনের প্রমাণ। শুধু আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার বিষয় হলে আত্মীয়ের স্ট্যাটাসের প্রমাণের প্রতিরূপ (গ্রিন কার্ড বা বৈধ ভিসা)। কেউ যদি আগেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে থাকেন তাহলে সেই কাগজপত্র। চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র। এগুলোর মধ্যে আছে—স্থানীয় চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের ব্যাখ্যা যেখানে অসুস্থতার প্রকৃতি এবং কেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন তা বলা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাপ্ত পত্র যেখানে এই রোগের চিকিৎসা করার বিষয়ে তাঁর সম্মতি আছে এবং চিকিৎসার আনুমানিক খরচ ও সময়ের বিষয়ে বলা আছে। যে ব্যক্তি বা সংস্থা যাতায়াত, চিকিৎসা ও বসবাসের খরচ বহন করবে তার অর্থনৈতিক দায়িত্বের বিবৃতি। এটা করা হয় সাধারণত ব্যাংক বা আয়-সঞ্চয়ের অন্যান্য বিবৃতি বা আয়কর রিটার্নের সত্যায়িত কপি দিয়ে।
(এই নিবন্ধ কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি কেবলমাত্র ইউএসসিআইএস এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র)
লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্ক
সেল: (৯২৯) ৩৯১-৬০৪৭;
ইমেইল: [email protected]
>ভিসা সম্পর্কিত বার্তা
পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক ভিসা প্রদানের বার্ষিক সংখ্যা কংগ্রেস কর্তৃক সীমাবদ্ধ। এই ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হয় যদি তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখ হালনাগাদ থাকে ও ভিসার সংখ্যা বর্তমান থাকে। যদিও সম্ভাবনা আছে, অগ্রাধিকার তারিখের পরিবর্তন হতে পারে এবং সাক্ষাৎকারের সময় ভিসার সংখ্যা আর বর্তমান নাও থাকতে পারে। আপনার ক্যাটাগরির ভিসার সংখ্যা যদি বর্তমান না থাকে, তবুও আপনার সাক্ষাৎকার যথা সময়ে হবে, তবে আপনার ভিসা ততদিন পর্যন্ত ইস্যু হবে না, যতদিন পর্যন্ত অগ্রধিকার তারিখ হালনাগাদ হয় এবং নতুন ভিসার সংখ্যা বর্তমান হয়। সকল অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীগণ তাঁদের অগ্রাধিকার তারিখের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://bit.ly/2EfaUuN) ভিসা বুলেটিন দেখতে পারেন।
মাস: জুন ২০১৮
F1 : ২২ এপ্রিল ২০১১: (আমেরিকান নাগরিকদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F2A : ২২ জুন ২০১৬: (এলপিআর ব্যক্তিদের স্বামী বা স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
FX : ৮ জুন ২০১৬: (F2A কেইসে যাদের অগ্রাধিকার তারিখ পুরোনো)
F2B : ১৫ আগস্ট ২০১১: (এলপিআর ব্যক্তিদের অবিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F3 : ১ মে ২০০৬: (মার্কিন নাগরিকদের বিবাহিত ছেলে/মেয়েদের জন্য)
F4 : ১৫ নভেম্বর ২০০৪: (মার্কিন নাগরিকদের ভাই/বোন ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
E3 : চলতি: (দক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)
EW : চলতি: (অদক্ষ কর্মী ও তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য)