আত্মহত্যার খবর প্রচারে এই প্রবণতা বাড়ে

গণমাধ্যমে আত্মহত্যার খবর প্রচারে আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ে। এ-সংক্রান্ত খবরের বিস্তারিত বর্ণনা ও চটকদার উপস্থাপনার কারণে আত্মহত্যা সংক্রমিত হতে পারে। এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

টাইম ম্যাগাজিনে কানাডার এই নতুন গবেষণাপত্রের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা গোপন কোনো বিষয় নয় যে সরাসরি বা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আত্মহত্যার খবর প্রকাশ পেলে প্রভাবিত হয়ে অনেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারেন।

নতুন এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করে গতকাল সোমবার কানাডীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার খবরগুলো বেশি প্রচার করলে বা আত্মহত্যার ঘটনাগুলোকে চটকদার করে উপস্থাপন করলে আত্মহত্যায় সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা বাড়তে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও নতুন গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক ড. আয়াল স্ক্যাফার বলেন, ‘আমরা বলছি না, আত্মহত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করা খারাপ। সাংবাদিকদের দোষারোপ করা আমাদের লক্ষ্য নয়। এই গবেষণা করার মানে এই নয় যে সাংবাদিকেরা কীভাবে কাজ করবেন, সেটা আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। তবে কীভাবে আত্মহত্যার সংবাদগুলো প্রকাশ করা উচিত, তার একটি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা এই গবেষণার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।’

গবেষণায় টরন্টোতে বহুল প্রচারিত দ্য নিউইয়র্ক টাইমসসহ ১৩টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত আত্মহত্যার খবরগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে চার বছরে ওই সব গণমাধ্যমে ১৭ হাজার প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৩৬৭টি নিবন্ধে আত্মহত্যার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ওই চার বছরে টরন্টোতে ৯৫০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার প্রতিবেদনগুলো কতটা প্রভাব ফেলেছে, সে বিশ্লেষণও করা হয় গবেষণায়। আত্মহত্যার খবর প্রকাশের পরের সপ্তাহগুলোয় আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে না কমেছে, সেটি দেখা হয়। পাশাপাশি যে সপ্তাহে আত্মহত্যার বড় কোনো ঘটনা বা উচ্চপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি বা তারকার আত্মহত্যার ঘটনা নেই, সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। এই দুটির তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরা হয় গবেষণায়।

এতে দেখা যায়, তারকাদের আত্মহত্যার খবর এবং তাঁরা কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন, এর বিস্তারিত বর্ণনা আত্মহত্যা সংক্রমিত করেছে। অপর এক গবেষণায় দেখানো হয়েছিল, ২০১৪ সালে হলিউড তারকা রবিন উইলিয়ামসের আত্মহত্যার খবর প্রচার হওয়ার পরের চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার ঘটনা ১০ শতাংশ বেড়েছিল।

বরং আত্মহত্যার নেতিবাচক দিক তুলে ধরে এবং আশার বার্তা দিয়ে প্রকাশিত খবর আত্মহত্যা ঝুঁকি রোধ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে ইতিবাচক লেখা এত কম ও অনিয়মিত বলেই হয়তো তা সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না।

এই জুনে ফ্যাশন ডিজাইনার কেট স্পেড ও তারকা শেফ অ্যান্থনি বোর্ডেইন আত্মহত্যার করার পর ব্যাপক সংবাদ প্রচার হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই গবেষণা করা হয়। ওই সময়ে কানাডার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (সিডিসি) প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়, দেশটিতে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে।