আরকানসাসে পিঠা উৎসব

পুলি, চিতই, ফুলঝুড়ি, গোলাপ, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা, ভাপা, বিবিখানাসহ নানা পিঠা নিয়ে উৎসবে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা
পুলি, চিতই, ফুলঝুড়ি, গোলাপ, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা, ভাপা, বিবিখানাসহ নানা পিঠা নিয়ে উৎসবে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

আমেরিকার আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে অভিবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে হোয়াইটহল কমিউনিটি সেন্টারে ১২ নভেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই প্রবাসে বাংলাদেশিদের এই পিঠা উৎসবের আয়োজন। বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছরই আরকানসাসের পাইনব্লাফ শহরে এ ধরনের পিঠা উৎসব হয়ে থাকে।
আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলের আবহাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মতই, শীতকালও ব্যতিক্রম নয়। নভেম্বরের শেষের দিকে হালকা শীতল বাতাস বয়ে যায়। শীতের সকাল শুরু হয় হালকা কুয়াশা দিয়ে, সূর্য উদয় হলেই ঠান্ডা কমে আসে। এ সময়টা বাংলাদেশের শীতের সকালকে মনে করিয়ে দেয়। এ যেন বাংলাদেশের সোনালি শীতের সকাল! এ সময় পিঠা-পায়েসের গন্ধে ভরে উঠে গ্রাম বাংলার চারদিক। এত সুন্দর শিশির ভেজা শীতে সুদূর আরকানসাসে হলেও বাঙালি পিঠা খাবে না তা কী হয়!
১২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় হরেক রকমের পিঠা নিয়ে হাজির হন অভিবাসী বাংলাদেশি সব পরিবার। লাল-নীল, সবুজ, বেগুনি রঙের সুতি, জামদানি শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে, বাহারি পিঠার ঝুড়ি হাতে সবাই সমবেত হন উৎসবে। পুলি পিঠা, চিতই পিঠা, ফুলঝুড়ি, গোলাপ পিঠা, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা, শীতের ভাপা, বিবিখানা পিঠা, নকশি পুলি, সিলেটের বিখ্যাত নুনগোড়া, দুধ চিতই, তেলের পিঠা, রস মঞ্জুরি, মালপোয়া, ঝুড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, নকশি পিঠা, ভাজা পুলি, ডিমের পানতোয়া, কলার পিঠা, দুধ পুলি, মুঠো পিঠা ছাড়াও ছিল শিঙারা ও পিয়াজুতে ভরে গেছে উৎসবস্থল।
প্রথমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয় পিঠা উৎসব। সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয়। সবাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানান। এরপর প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের জন্য ছিল পিঠার নাম বলার প্রতিযোগিতা ও উপস্থিত বক্তৃতা। দুটি প্রতিযোগিতার প্রথম বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণকারী বাচ্চাদের এক থলে ক্যানডি উপহার দেওয়া হয়। তারপর সবচেয়ে সুস্বাদু তিনজন পিঠা তৈরিকারীকে পুরস্কৃত করা হয়।
পরে স্থানীয় শিল্পী শবনম আলী সুমি ও শওকত দম্পতি দ্বৈত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘পৃথিবী আমারে চায়’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে’ ইত্যাদি গান। নাজমুল আলম কিরণ ‘চাঁদকে বলি তুমি সুন্দর হও’, ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো’, ‘চাঁদতারা সূর্য নও তুমি’, ‘মাঝি পাল ছাড়িয়া দে’ ইত্যাদি গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন নাজনীন কাদির ও কায়কোবাদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় বাঙালির পিঠা খাওয়া। লাইনে সারিবদ্ধ হয়ে প্লেটে নিয়েছেন পছন্দের সব পিঠা। পিঠার সেই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হোয়াইটহল কমিউনিটি সেন্টারে। নৈশভোজের পর মুখ দিয়ে বেলুন ফুলানো প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এই পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা ও বাঙালি কমিউনিটিকে একাত্ম করার জন্যই বাঙালিদের এই প্রচেষ্টা।