আলোচনা নিয়ে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র

চীনের সঙ্গে তালেবানের আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অঞ্চল নিয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর একটা স্বার্থ আছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই (ডানে) এবং তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বরাদার। গত বুধবার তিয়ানজিনে।
এএফপি

আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বিস্তৃত ও জোরালো করার প্রত্যাশায় চীন সফর করল তালেবানের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের উষ্ণ আতিথেয়তায় সিক্ত করেছে বেইজিং। আফগানিস্তান নিয়ে চীনের বিশেষ আগ্রহ বা তালেবানের সঙ্গে তার এমন যোগাযোগ দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তির কারণ মনে হতে পারে। তবে এ ধারণাকে বদলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আফগানিস্তানে বেইজিংয়ের স্বার্থ একটি ‘ইতিবাচক বিষয়’ হয়ে উঠতে পারে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তালেবান তাদের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে চীন সফর করল তালেবানের ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতায় তালেবান আবারও ফিরলে নিজেদের পক্ষে তারা যাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায় করতে পারে, সেটিই এ কূটনৈতিক তৎপরতার মূল লক্ষ্য।

গত বুধবার চীনের উপকূলীয় তিয়ানজিন শহরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবান প্রতিনিধিরা। বৈঠক নিয়ে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ওয়াং তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদারকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।

এর আগে ২০১৯ সালে তালেবানের একটি প্রতিনিধিদলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বেইজিং। ধারণা করা হয়, মিত্র পাকিস্তানের মাধ্যমে চীন আগে থেকেই তালেবানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বজায় রেখে আসছে।

ওয়াং ই বলেন, আগস্টের শেষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কাজটি মূলত আফগানিস্তান নিয়ে গৃহীত মার্কিন নীতির ব্যর্থতারই পরিচায়ক। তিনি তালেবানকে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আফগানিস্তান নিয়ে চলা শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি আনার জন্য সংগঠনটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

একসময় আফগানিস্তানে চীনের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে বাধা দিলেও বর্তমানে দেশটি তার সেই অবস্থান পাল্টাচ্ছে। আফগানিস্তান পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধে পতিত হোক, তা চাইছে না ওয়াশিংটন। ভারতে ব্লিঙ্কেনের সফরকালে এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। চীনে তালেবানের প্রতিনিধিদলের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বিষয়ে চীনের অধিকতর ভূমিকা ইতিবাচক হতে পারে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, এ অঞ্চল নিয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর একটা স্বার্থ আছে। তবে এ অঞ্চল গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে যাক বা তালেবানের হাতে এখানকার পতন ঘটুক, সে ব্যাপারে কারও স্বার্থ নেই। সিএনএন-নিউজ১৮ টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, এই দৃষ্টিকোণ থেকে চীন ও অন্যান্য দেশ যদি কাজ করে, তবে তা ইতিবাচক হতে পারে।

আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়া বেইজিংয়ের জন্য খুশির খবর। তবে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা গেলে দেশটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে—এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন বেইজিং।

বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধিদল চীনকে এ বলে আশ্বস্ত করেছে যে তারা কাউকে প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না।

সম্প্রতি আফগান সেনাদের হটিয়ে আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি এলাকা (তালেবানের দাবি ৮৫ শতাংশ) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বেইজিংয়ের আশঙ্কা, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় গেলে উইঘুররা সেখান থেকে বেইজিংবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জিনজিয়াং প্রদেশে বছরের পর বছর উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তারা।