ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত সায়মা ওয়াজেদ

সায়মা ওয়াজেদ
সায়মা ওয়াজেদ

ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইজরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের অটিজম-বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্ন ও উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ইপ্রিন্সটন ক্লাব অব নিউইয়র্ক’ আয়োজিত সিমা কলাইনু নামে নিউইয়র্কভিত্তিক একটি শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল এবং এর আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আই কেয়ার ফর অটিজম’-এর বার্ষিক প্রাতরাশ অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সিমা কলাইনু নিউইয়র্কের প্রথম শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরোর সব সম্প্রদায়ের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শতাধিক শিশুকে অটিজম সেন্টার, স্কুল ও হোম সার্ভিসের সেবা দিয়ে আসছে।
পুরস্কার গ্রহণকালে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অটিজম ও অন্যান্য নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত মানুষের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের
ক্ষেত্রে ‘গ্লোবাল রিনাউন্ড চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া গত মাসে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় এ অঞ্চলের ১১টি দেশের জন্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে অটিজম-বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভুটানে অনুষ্ঠিত অটিজম-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অটিজম ও অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডারের জন্য ‘থিম্পু ডিক্লারেশন’ গ্রহণে সায়মার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়টি সামনে আনার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় ২০১৪ সালে সায়মা ওয়াজেদকে ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন। বার্তাটিতে তিনি বলেন, ‘অটিজম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিমা কলাইনুর এই স্বীকৃতি পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। সিমা কলাইনুর মতোই বাংলাদেশ ও এশিয়া অঞ্চলে এ ধরনের পেশার মানুষের জন্য পরিকল্পিত ও ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টিতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। অটিজম কোনো ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ নয়। এ কারণে এর জন্য বিশেষ ধরনের সেবা ও কর্মসূচির প্রয়োজন রয়েছে।’

সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন
সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তি তাদের পরিবার ও সমাজের আর্থসামাজিক চাহিদাসংবলিত জাতিসংঘের ৬৭/৮২ প্রস্তাব গ্রহণে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি দাবি করেন, অটিজম-বিষয়ক জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অটিজমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তার জন্য বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। অটিজম বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা যুক্ত হয়, তাহলে তা অটিজম ও এ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের জীবনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে পারে।
প্রাতরাশ অনুষ্ঠানে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনসহ নিউইয়র্ক নগরের কাউন্সিল মেম্বার ব্রাডল্যান্ডার ও মার্ক লেভিনি, নগর কাউন্সিলের স্পিকার মেলিচ্ছা মার্ক-ভিভারিতোর কমিউনিটি লিয়াজোঁ কার্যালয়ের কর্মী মিস জেনি বার্গার ও কলবি হেয়ার্ড নামে নয় বছর বয়সের একটি অটিস্টিক শিশুকেও পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
কলবি হেয়ার্ড নামের এই বালক পূর্ণবয়স্ক কোনো মানুষের সাড়া দেওয়ার আগেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্লোরিডার একটি পুকুরে সাঁতরানোর সময় ডুবে যাওয়া একটি শিশুর প্রাণ রক্ষা করেছিল। নিউইয়র্কের এই শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল সম্মানিত সব পুরস্কারপ্রাপ্তকে অটিস্টিক শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম অ্যাওয়ার্ড হিসেবে প্রদান করে।