ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে আইন প্রস্তাব

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ইসরায়েলের কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ করে ফিলিস্তিন সমর্থকেরা। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিকতম এই সংঘাতে গত এক সপ্তাহে শিশুসহ অন্তত ১৮৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১৮ মে, ম্যানহাটন
ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের উদারনৈতিক আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থকে একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯ মে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এই খসড়া আইন উপস্থাপন করেন। এতে ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, শিগগিরই তারা ইসরায়েলকে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করবে। প্রতিদিন ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ফিলিস্তিনে নিরীহ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেসে কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিওর আইন প্রস্তাবটি অনেকটাই প্রতীকী বলে মনে হচ্ছে। অধিকাংশ আইন প্রণেতাই ইসরায়েলের সমর্থক এবং খসড়া আইনটি পাশ করার জন্য ভোট গ্রহণের প্রতিক্রিয়া বা সময় দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। এরপরও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন আইন প্রণেতাদের একচোখা সমর্থনে ফাটল ধরেছে এবং দলের উদারনৈতিক কিছু আইন প্রণেতা দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসায় বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও এক বিবৃতিতে বলেন, যুগের পর যুগ যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। এই অস্ত্র দেওয়ার সময় ইসরায়েলকে জিজ্ঞেসও করা হচ্ছে না, তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যূনতম অধিকারকে সম্মান করে কি না। তিনি বিবৃতিতে বলেন, এসব করে যুক্তরাষ্ট্র অগুনতি মানুষের মৃত্যু ও উচ্ছেদে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেকেই যখন অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন, তখন সরাসরি হামলার কোনো অস্ত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার পরিণামে সহিংসতা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওকাসিও।

আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিওর সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের মার্ক পেকোন, রাশিদা তালেব, কোরি বুশ, বেটি ম্যাককালাম, আয়না প্রিসলি, ইলহান ওমর, পামেলা জয়পাল ও আন্ড্রে কার্সন ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ মে কংগ্রেসকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহের কথা। এর মধ্যে প্রধানত রয়েছে বোয়িং উৎপাদিত বিশেষ ধরনের যুদ্ধবিমান, যা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাতে সক্ষম।

এ ধরনের অস্ত্র বিক্রির জন্য কংগ্রেসকে ৩০ দিনের পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে কংগ্রেস আইন করে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিতে পারে। এবার ইসরায়েলের কাছে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির জন্য সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ দিন। ২০ মে’র মধ্যে ওকাসিও উপস্থাপিত প্রস্তাবিত আইন নিয়ে কোনো আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।

আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও, মার্ক পেকোন, রাশিদা তালেব সহযোগী আইন প্রণেতাদের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছেন, শর্তহীন কোনো দেশের কাছে, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো দেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি না করতে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি করা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কাজ না করে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করলে সহিংসতা আরও উসকে উঠবে।

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়লেও ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯ মে নেতানিয়াহুকে ফোন করে সহিংসতা কমানোর কথা বলার কিছুক্ষণ পরই এক ভিডিও বার্তায় তাঁর এই ঘোষণা আসে।

এদিকে গাজার ক্ষমতাসীন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, চলমান সংঘাতের অবসানে যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, সে আলোচনায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করলে আলোচনার পথ তৈরি হবে।

ইসরায়েল আগ্রাসী হয়ে উঠলেও ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে চললেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করায় হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করছেন উদারপন্থীরা। পূর্ব জেরুজালেমের আশপাশের এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদে ইসরায়েলি পরিকল্পনার প্রকাশ্য নিন্দা না জানানোয় ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার এক বক্তৃতায় নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ জানতে চান, ‘ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি?’ প্রগতিশীল এই ডেমোক্র্যাট সদস্য সপ্তাহান্তে টুইটারে লেখেন, বাইডেন প্রশাসন যদি কোনো মিত্রের (ফিলিস্তিন) পাশে দাঁড়াতে না পারে, তবে কে দাঁড়াতে পারবে? তারা (প্রশাসন) কীভাবে মানবাধিকারের পাশে দাঁড়ানোর গ্রহণযোগ্য দাবি করতে পারে?

মিশিগান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য রাশিদা তালেব গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কার্যালয় অবস্থিত ভবনটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করে বলেন, ইসরায়েল গণমাধ্যমকে নিশানা করছে, যাতে বর্ণবাদী নেতা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে দেশটির যুদ্ধাপরাধ বিশ্ব দেখতে না পারে। বাইডেন প্রশাসনের প্রতি নানাভাবে ক্ষোভ জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ অনেকে।