ওবামার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আক্রমণাত্মক ডেমোক্র্যাটরা

২৬ সেপ্টেম্বর বিচারক অ্যামি কোনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টের খালি হওয়া পদে নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।ফাইল ছবি: রয়টার্স

নির্বাচনী প্রচারে উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মার্কিন সিনেটে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত অ্যামি কোনি ব্যারেট স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সিনেটে তাঁর সূচনা বক্তব্য দিয়েছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা আইন নিয়ে ডেমোক্র্যাট দল সিনেট শুনানিতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকান দল নিয়ন্ত্রিত মার্কিন সিনেটে ৪৮ বছর বয়সী অ্যামি ব্যারেটের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। নির্বাচনের মাত্র ২২ দিন বাকি। ডেমোক্র্যাট দল যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে মনোনয়ন প্রক্রিয়া দেরি করতে চেষ্টা করছিল। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দল দ্রুতই এই মনোনয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

গতকাল সকালে সিনেটে চারদিনের শুনানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা আইন বা ওবামা কেয়ার বাতিলের জন্য ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, রক্ষণশীল বিচারক হিসেবে অ্যামি ব্যারেটের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে এই মামলার ফলাফলে প্রভাব পড়বে। ওবামা কেয়ার বাতিল হলে আমেরিকার দুই কোটির বেশি লোকজন স্বাস্থ্যসেবার বাইরে চলে যাবে।

রিপাবলিকান দল বেশ কয়েক দফা চেষ্টা করেও কংগ্রেসের মাধ্যমে ওবামা কেয়ার বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও নানা আদেশ জারি করেন, কর আইন পরিবর্তন করে ওবামা কেয়ার বাতিল করার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে আইনটি বাতিল করাকে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দল তাঁদের সাফল্য হিসেবে মনে করছেন।

ওবামা কেয়ার আইনে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণ না করলে কর দেওয়ার সময় জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। রিপাবলিকান ও ট্রাম্পের প্রচারশিবির বলছে, রাষ্ট্র কোনো নাগরিককে স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণে বাধ্য করতে পারে না। এ নিয়ে ট্রাম্প এক আদেশ জারি করে এর বাধ্যবাধকতা বন্ধ রেখেছেন।

বিচারব্যবস্থা এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে রক্ষণশীল ধারণার বিচারক অ্যামি ব্যারেট। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁর উপস্থিতিতে ওবামা কেয়ার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নিজেদের অনুকূলে আনতে চায় রিপাবলিকান দল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ন ইস্যু। ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ১০ জনের মধ্যে আটজনই স্বাস্থ্য বিমাকে তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে বলে জরিপে দেখা গেছে।

বিচারক অ্যামি ব্যারেট চারদিনব্যাপী সিনেট শুনানির প্রথম দিনে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, প্রতিটি সমস্যা সমাধান বা প্রতিটি ভুলকে সঠিক করার দায়িত্ব আদালতের নয়।

অ্যামি ব্যারেট তাঁর বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষট্রের প্রতিটি নাগরিক একটি স্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশা করে এবং সংবিধানে লেখা আইনের স্বাধীন ব্যাখ্যা আশা করে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এমন ভূমিকা গ্রহণ করে দেশকে আমি সেবা দিতে সক্ষম হবো।

অ্যামি ব্যারেটের মনোনয়ন নিশ্চিত হলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টত রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ( ৬-৩) চলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিকরা মনে করেন , এর ফলে নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যায় আগামী দিনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। গর্ভপাতের অধিকার, অভিবাসন, স্বাস্থ্য সেবার অধিকার , অগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার, সমকামিতা , সমলিঙ্গের দাম্পত্যসহ নাগরিক অধিকারের নানা বিষয় নিয়ে মার্কিন সমাজে ব্যাপক বিভক্তি। এ নিয়ে মার্কিন সংবিধানের আলোকে সুপ্রিম কোর্টও তাঁদের ব্যখ্যায় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চার্লস শুমার সোমবার দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, অ্যামি ব্যারেটের সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা বাতিল না করার কোনো ইঙ্গিত নেই । সিনেটর চার্লস শুমার বলেন, কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) নিয়ে বিচারক অ্যামি ব্যারেট শুনানিতে উপস্থিত হয়েছেন।

উদারনৈতিক বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টে একজন বিচারপতির পদ খালি হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রক্ষণশীল বিচারক হিসেবে পরিচিত অ্যামি ব্যারেটের নাম ঘোষণা করেন।

সিনেটে জুডিশিয়েল কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, শুনানিতে অ্যামি ব্যারেটের মনোনয়ন নিশ্চিত করার কোনো পরিবর্তন হবে না। সব ডেমোক্র্যাট সিনেটর বিপক্ষে ভোট দেবেন এবং সব রিপাবলিকান মনোনয়নের পক্ষে ভোট দেবেন।

এ সপ্তাহের মধ্যে চারদিনের টানা শুনানির পর সিনেটে সাধারণ ভোট হবে। এর মধ্যে সিনেটররা পরের তিনদিন নানা প্রশ্ন করবেন বিচারক অ্যামি ব্যারেটকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোনয়নে স্বাক্ষর করবেন। ৩ নভেম্বরের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।