করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা গুতেরেসের

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই প্রশংসা করেন।

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের অতীত রেকর্ডের উদাহরণ টেনে মহাসচিব গুতেরেস বলেন, কোনো ঝুঁকি নিরসনের বৈশ্বিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সময় শীর্ষস্থানীয়, তাই কোভিড অতিমারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের এ ধরনের সাফল্য দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি।

গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাঁর সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির উচ্চকিত প্রশংসা করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়েই সম্মত হয়েছেন যে, কোভিড-১৯ এর টিকা ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করে মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন—আর তা হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো।’

মহাসচিব আরও বলেন, সমস্যাটির সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ সদা প্রস্তুত রয়েছে।

ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহাসচিবকে অবহিত করেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার অনুরোধ জানান।

জলবায়ু কর্মসূচিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের যে সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জলবায়ু-অর্থায়ন সচল করতে মহাসচিবের আহ্বানকে স্বাগত জানান। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে এবং এ বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৬ সফল করতে জাতিসংঘের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত জলবায়ু তহবিলের ৫০ ভাগ বরাদ্দ পেতে দাতাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক অভিযোজন কর্মসূচি এবং নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপকে অসাধারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরিত হতে যাচ্ছে মর্মে সন্তুষ্টির কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তরণ পরবর্তী সময়েও যেন নতুন সহায়তা ব্যবস্থার আওতায় সদ্য উত্তরিত দেশগুলোকে বিবেচনা করে, সে জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে মহাসচিবের দপ্তরের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উত্তরণ কেবল জিডিপি দ্বারা পরিমাপ করা কোনো কারিগরি বিষয় নয়, এটি বিবেচনার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক নাজুক সূচকগুলোর ব্যবহার করা যেতে পারে মর্মে মত প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘উত্তরণ কোনো শাস্তি হতে পারে না। এটি হতে পারে পুরস্কার।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবে অংশগ্রহণ করতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভার্চ্যুয়াল এ বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।