কর্মী সংকটে যুক্তরাষ্ট্র

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসছে। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে কর্মী সংকট। ফার্স্ট ফুডের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো কোম্পানি মানুষকে চাকরিতে যোগদানে উৎসাহিত করতে বোনাস ঘোষণা করছে।

নিউইয়র্কসহ বড় বড় নগরে দ্রুত চাঞ্চল্যে ফিরে আসছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মী সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। প্রতিষ্ঠান খুলে ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি দিচ্ছে নানা প্রতিষ্ঠান। মজুরি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা করে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিষ্ঠানে।

কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার এ সময়েও যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এখনো ৮০ লাখ কম কর্মসংস্থান হয়েছে। মহামারির কারণে এমনটি হলেও অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ কাটছে না। আবার বেকারত্ব ৬ শতাংশের বেশি থাকলেও কাজ করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

মহামারির সময়ে কাজ ছেড়ে আসা বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী আর কাজে ফিরছে না। অনেকেই অবসরে চলে গেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠলেও নানা জটিলতায় অনেকেই স্থায়ীভাবে কাজ করার অযোগ্য হয়ে গেছে। কিন্তু সেই হিসাবে চাকরির বাজারে নতুন কর্মী যোগ হয়েছে অনেক কম। গত এক বছর কার্যত মার্কিন অভিবাসন বন্ধ থাকায় এই জনপ্রবাহে আসা কর্মজীবীদেরও কাজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বেকারভাতার মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে অনেক কর্মজীবী আপাতত নতুন কাজ খুঁজছেন না।

এলাইড ইউনিভার্সেল নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানি আগামী দুই মাসে তাদের কোম্পানিতে ৩৫ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা। এই কোম্পানি বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতাল, স্কুল, কারখানা, আবাসন প্রকল্পসহ অফিস-আদালতে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। নামমাত্র ট্রেনিং দিয়েই সাধারণ নিরাপত্তা কর্মীদের কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকে কোম্পানিটি। এলাইড ইউনিভার্সেলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মরগান প্রাইস বলেন, কাজের জন্য পর্যাপ্ত লোক পাওয়াই এখন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিউজার্সির উৎপাদন কারখানা ও সরবরাহ স্থাপনা কেন্দ্রগুলোতে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে। কোনো কোনো কোম্পানি পুরোনো কর্মীদের রেফারেন্সে নতুন কর্মী নিয়োগ দিলে সুপারিশদাতাকে এক হাজার ডলার পর্যন্ত বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ইনডিড-এর অর্থনীতিবিদ নিক বাঙ্কার বলেন, অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবলের চাহিদা বাড়ছে। পানশালা, রেস্তোরাঁসহ কারখানা মালিকেরা জানিয়েছে, তারা নিত্যদিনের কাজ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত কর্মী পাচ্ছে না।

চাকরির বাজারে চাকরিপ্রার্থীদের নয়, এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কর্মী সংগ্রহের জন্য তারা মজুরি বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা, কাজে যোগদানের আগেই বোনাসসহ নানা প্রণোদনা ঘোষণা করছে।

এলাইড ইউনিভার্সেলের মতো প্রতিষ্ঠানে শুধু সাধারণ নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াও প্রশাসনিক, হিসাব সংরক্ষণ, সুপারভাইজারসহ নানা পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো এলাকায় কোম্পানি কাজে যোগদানের আগেই কর্মীকে এক হাজার থেকে দুই হাজার ডলারের আগাম বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিয়োগ দেওয়া কর্মী খুঁজছে। এমনকি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া এলাকা বা অ্যারিজোনার ফিনিক্স এলাকায় এলাইড কর্মী নিয়োগের জন্য আগাম তিন হাজার ডলারের বোনাস ঘোষণা করেছে।

ম্যাকডোনাল্ড, ডানকিনসহ ফার্স্ট ফুডের চেইন স্টোরগুলো মজুরি বৃদ্ধি করে কর্মী চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রেখেছে। ডানকিন ডোনাট কোম্পানির এক ব্যবস্থাপক বলেছেন, তাদের ম্যানহাটনের একটি দোকানে ২১ জন কর্মীর কাজ করার কথা থাকলেও চালানো হচ্ছে মাত্র ১৫ জন কর্মী দিয়ে। চেষ্টা করেও তাঁরা কাজের জন্য লোক পাচ্ছেন না।

যেমন করেই হোক প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে এলাইড ইউনিভার্সেলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মরগান প্রাইস জানিয়েছেন। নানাভাবে এসব কোম্পানিতে চাকরির জন্য এখন সাক্ষাৎকতার নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যেমন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া যাচ্ছে, তেমনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় আগের ধারণ করা ভিডিওতে প্রশ্নের জবাব দিয়ে নতুন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া যাচ্ছে।

কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী বাস্তবতায় গাড়িতে বসে আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে চাকরি। চাকরিপ্রার্থী গাড়িতে বসে থাকবেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গাড়ির কাছে এসে প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গেই চাকরির জন্য যোগ্য বা অযোগ্য যাই হোক, বলে দেবেন।