কানসাসে বাংলাদেশের দুই মেধাবী মুখ

দুই বন্ধু তারেক ও প্রিন্স। সেই ২০১৩ সাল। রাজধানী ঢাকার এক ভিসা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পরিচয়। সে থেকে তাঁরা দুজন যেন এক মায়ের সন্তান। দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিকিউরিটি (এমআইএস) বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। সংবর্ধিত শত শত শিক্ষার্থীর মাঝে বাংলাদেশের এ দুই মেধাবী ছাত্রের তৃপ্তির হাসিতে যেন একরাশ সোনালি স্বপ্ন!
১২মে কানসাসের উচিটা শহরতলির এন্ট্রাস্ট ব্যাংক এরিনা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের ৫শতাধিক ছাত্রছাত্রীর (গ্র্যাজুয়েশন) সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়। এতে বাংলাদেশি দুই মেধাবী ছাত্রের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। জমকালো এ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. এমি ব্রিজ কেরি বলেন, ‘জীবন চলার পথে এ অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মানুষের কল্যাণে বিশ্বের জটিল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাবে—তোমাদের কাছে এ প্রত্যাশায় রইল।’
ভবিষ্যৎ তথ্য নিরাপত্তার জটিল সমস্যার সমাধানে ও আধুনিক প্রযুক্তিবান্ধব বিশ্ব নির্মাণে বাংলাদেশি এ দুই তরুণের রয়েছে নানা চিন্তা। উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে প্রিন্স মহিউদ্দিন জানান, সর্বসাম্প্রতিক জ্ঞান চর্চায় যে যত এগিয়ে, উন্নত বিশ্বে (আমেরিকায়) তাঁর অবস্থান তত উচ্চতায়। ‘হাল ছাড়িনি, চেষ্টা করছি, যত দূর যাওয়া যায়। এ যুগে যে যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি তত আধুনিক মানুষ হয়ে উঠবেন।’ বলেন মহিউদ্দিন।
প্রিন্সের বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। স্কুলজীবন কাটে নিজ এলাকার আল-আমীন একাডেমীতে। তারপর রাজধানী ঢাকার কমার্স কলেজে পড়েন। এরপর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে বিবিএ শেষ করে সোজা আমেরিকায় আসেন। তখন থেকে অহর্নিশ সাধনা। নানা প্রতিকূলতা, তবুও এগিয়ে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা।
বন্ধু তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘দীর্ঘ ৫বছর আগে আমরা দুজন উচ্চশিক্ষার আশায় আমেরিকার কানসাস অঙ্গরাজ্যের উচিটা শহরে আসি। এরপর নতুন-পুরাতন বন্ধুরা মিলে রাত জেগে আড্ডা, পড়ালেখা, ভ্রমণ, আরও কত কী!’
স্বর্ণালি জীবনটাকে আরও অর্থবহ করতে পড়ালেখার ফাঁকে ২০১৫ সালে নিজ জেলা নরসিংদীর মেধাবী মেয়ে আনিকা সোলতানাকে বিয়ে করেন তারেক। প্রিন্সসহ সবাই মিলে বাংলাদেশে গিয়ে হই-হুল্লোড় করে আমার (তারেক) বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারকে বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল, এ মাহেন্দ্রক্ষণে (গ্র্যাজুয়েশন) জীবনসঙ্গিনী আনিকাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাটাব। কিন্তু সাম্প্রতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে আবারও ফিরে যেতে হচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ফিরছেন মেধাবী ছাত্র তারেক। ইদানীং ছাত্রদের জন্য পড়ালেখা শেষে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাস সংকুচিত হয়ে আসছে। স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এ অবস্থায় কতজন রয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানে না। তারেক বলেন, ‘অনেক দিনের বন্ধুদের ছেড়ে চলে যাব। খুব খারাপ লাগছে। উচিটা শহরকে বড্ড আপন করে নিয়েছিলাম। সব মানুষ যেন আমার অনেক আগের পরিচিত।’