কে হচ্ছেন গিনসবার্গের উত্তরসূরি
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক রুথ বেইডার গিনসবার্গের মৃত্যুর পর আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরির বিষয়টি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ওই পদে একজন নারীকে নিয়োগের কথাই ভাবছেন তিনি। সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে এরই মধ্যে উঠে এসেছে অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম। কে এই অ্যামি কোনি ব্যারেট?
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব আপিলের সেভেন্থ সার্কিটের বিচারক অ্যামি কোনি ব্যারেট দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সুপ্রিম কোর্টে কাজ করেছেন। অধ্যাপনা করেছেন নটর ডেম ল’ স্কুলে।
অ্যামি কোনি ব্যারেটের সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে নিউ লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিয়েন্সের সাউথ বেন্ডের সেন্ট জোসেফ ক্যাথলিক চার্চের যুব-বিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস্টিন বাগলো বলেন, দুই বছর আগে সাউথ বন্ডের গির্জাতেই তাঁর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। খুবই বন্ধুবৎসল বলতে হবে তাঁকে। একই সঙ্গে ভীষণ আন্তরিক ও চিন্তাশীল মানুষ তিনি। তিনি বলেন, ‘সেদিনের সেই আলোচনায় উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল আমার। কিন্তু তিনি আমার কথা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন, মত দিয়েছেন এবং আমার অভিমতকে যেভাবে গ্রহণ করেছেন, তা ছিল এক কথায় চমৎকার।’
গিনসবার্গের শূন্য পদ দ্রুততার সঙ্গে পূরণের যে পরিকল্পনা ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন, তা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।জো বাইডেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, ডেমোক্রেটিক দল
অ্যামি কোনি ব্যারেট সম্পর্কিত ক্রিস্টিন বাগলোর এই স্মৃতিচারণের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে তাঁর নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি। রুথ বেইডার গিনসবার্গের মৃত্যুর পর এক টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি খুব দ্রুতই এই শূন্য পদে নিয়োগ দেবেন। এর পরপরই তিনি জানান, একজন নারীকেই এই পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।
আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। উদারনৈতিক বলে খ্যাত গিনসবার্গের মৃত্যু মার্কিন নির্বাচনে নতুন এক সংকটের জন্ম দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রিপাবলিকানরা চাইছেন, দ্রুত তাঁর শূন্য পদে কাউকে নিয়োগ দিতে। আর এমন তৎপরতাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন ডেমোক্র্যাটরা। গতকাল রোববার এ সম্পর্কিত এক প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেন, গিনসবার্গের শূন্য পদ দ্রুততার সঙ্গে পূরণের যে পরিকল্পনা ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন, তা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের এই বিরোধিতায় পিছু হটছেন না ট্রাম্প। এরই মধ্যে গিনসবার্গের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে সামনে এসেছে অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গুড বুকে’ ব্যারেট রয়েছেন আগে থেকেই। ২০১৮ সালে বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডি অবসর নিলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে যে কয়েকজনের ক্ষুদ্র তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে ছিলেন ব্যারেট। গত বছর অ্যাক্সিওসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরিই বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে (ব্যারেট) গিনসবার্গের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য রেখে দিয়েছি।’
ব্যক্তি জীবনে সাত সন্তানের মা ব্যারেটকে নিয়ে এরই মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে অ্যামি কোনি ব্যারেট নিয়োগ পেলে তিনি গর্ভপাতের অধিকার সম্পর্কিত আদালতের নির্দেশনাটি বদলে দেবেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি গর্ভপাতের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত
রক্ষণশীল বিচারক অ্যান্টোনিন স্ক্যালিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন ব্যারেট। ২০১৬ সালে মারা যাওয়া স্ক্যালিয়া ব্যারেটকে নিয়ে খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। বর্তমানে ৪৮ বছর বয়সী ব্যারেটকে নিজেদের লোক মনে করেন রক্ষণশীলেরা। তাঁদের দৃষ্টিতে ব্যারেট হলেন একজন খুবই কড়া ও কাঠামোবাদী মানুষ, যাঁর মার্কিন সংবিধানের প্রতি নিবেদন প্রশ্নাতীত। ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে।
ব্যক্তি জীবনে সাত সন্তানের মা ব্যারেটকে নিয়ে এরই মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে অ্যামি কোনি ব্যারেট নিয়োগ পেলে তিনি গর্ভপাতের অধিকার সম্পর্কিত আদালতের নির্দেশনাটি বদলে দেবেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি গর্ভপাতের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
২০১৭ সালে সিনেটে বিচারক হিসেবে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের সময় তাঁকে সিনেটর ডিয়ান ফিনস্টেইন বলেছিলেন, ‘আপনার মধ্যে অন্ধবিশ্বাস বেশ চড়াভাবে রয়ে গেছে।’
সিনেট সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্যকে অনেক ক্যাথলিক ভালোভাবে নেননি। যদিও ব্যারেট নিজে এই প্রশ্নকে বেশ স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন এবং শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন। সেদিনের সেই প্রশ্নই তাঁকে সহায়তা করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষুদ্র তালিকায় ঢুকে পড়তে। তাঁর ধর্মবিশ্বাস ও রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে অনেক ধরনের কথা প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন অনেক সিনেটরই।
যদিও বিষয়টিকে হাস্যকর মনে করছেন নটর ডেম ল’ স্কুলে ব্যারেটের সহকর্মী অধ্যাপক পাওলো জি কারোজ্জা। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এমন ধারণাকে সত্যিকার অর্থেই হাস্যকর ঠেকেছে।’
গিনসবার্গের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম আলোচনায় আসার পর থেকেই মার্কিন গণমাধ্যম ও ডেমোক্র্যাটরা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিসহ বিভিন্ন বিষয়ের দিকে নজর রাখতে শুরু করেছে। বিশেষত গর্ভপাতের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়া করে একজনকে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে বসানোর যে চেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন করছে, তাতে শঙ্কায় পড়েছে ডেমোক্রেটিক দল। এটি অ্যামি কোনি ব্যারেটের বদলে অন্য কেউ হলেও এ শঙ্কা জারি থাকবে। মার্কিন আদালতে বিচারক নিয়োগের সময় দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দর্শনের সামঞ্জস্যের বিষয়টি খোঁজা হয়। সে ক্ষেত্রে রিপাবলিকান আমলে কেউ নিয়োগ পেলে, তিনি যে রিপাবলিকানদের পক্ষেই অবস্থান নেবেন, তা না বললেও চলে। আর এ কারণেই ডেমোক্র্যাটরা উদ্বেগের মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তাঁরা চাইছেন, এ ধরনের নিয়োগ আটকে দিতে।