খাসোগি হত্যার নথি কেন প্রকাশ হচ্ছে না, জানতে চান আদালত

নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি।
ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজেদের হেফাজতে নথি থাকার বিষয়টি স্বীকার করতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন নিউইয়র্কের একজন বিচারপতি। গত মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত একটি রুল দেন তিনি। মানবাধিকারকর্মীরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এই রুলের পাশাপাশি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের (ওডিএনআই) কাছে তারা কেন খাসোগি হত্যাকাণ্ডের নথি এবং সিআইএর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না, সেই ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক জামাল খাসোগি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে তুর্কি বাগদত্তার সঙ্গে নিজের বিয়ের কাগজপত্র আনতে যান। এ সময় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাঁকে। পরে তাঁর লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। এতে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েন সৌদি আরব ও দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

রুলে নথিগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া না হলেও ‘ওপেন সোসাইটি জাস্টিস ইনিশিয়েটিভ’ এ আদেশকে ‘খাসোগি হত্যারহস্য ধামাচাপা দিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্লজ্জ চেষ্টার’ বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছে। নথি প্রকাশের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী অমৃত সিং এ প্রসঙ্গে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে আদালতের এই আদেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এক পদক্ষেপ।

খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিআইএর একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য সৌদি যুবরাজকে দায়ী করা হয়েছে বলে খবরে জানা যায়। এ নিয়ে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি সৌদি যুবরাজকে উদ্ধার করেছেন।

তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট মার্কিন আইনের আওতায় ধনকুবের জর্জ সরোসের প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য ওপেন সোসাইটি জাস্টিস ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খাসোগি হত্যা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নথিপত্র সম্পর্কে জানতে একটি মামলা করেন। পরে আদালত ওই রুল দেন।

এর আগে সিআইএ এবং ওডিএনআই ওই প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ নাকচ করে দেয়। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছে ওই সব নথিপত্র আছে কি না, সেই বিষয়টিই নিশ্চিত করেনি।

এমন প্রেক্ষাপটে ফেডারেল বিচারপতি পল এঙ্গেলমায়ার সরকারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে চেপে রাখা নথিগুলো সরবরাহ করার ও তা প্রকাশ না করার যৌক্তিকতা তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। রুলিংয়ে এই বিচারপতি ২০১৮ সালের শেষ দিকে ট্রাম্পের দেওয়া একটি বক্তব্যও তুলে ধরেন। যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে রেকর্ডকৃত নথি রয়েছে।’

রুলে নথিগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া না হলেও ‘ওপেন সোসাইটি জাস্টিস ইনিশিয়েটিভ’ এ আদেশকে ‘খাসোগি হত্যারহস্য ধামাচাপা দিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্লজ্জ চেষ্টার’ বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছে। নথি প্রকাশের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী অমৃত সিং এ প্রসঙ্গে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে আদালতের এই আদেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এক পদক্ষেপ।

কানাডায় ঘাতক পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার যুবরাজের
আল-জাজিরা বলেছে, সৌদি আরবের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যার জন্য কানাডায় ঘাতক দল পাঠানোর অভিযোগ নাকচ করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। নির্বাসিত সাবেক এই কর্মকর্তার নাম সাদ আল-জাবরি। তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলা করেছেন।

মামলায় আল-জাবরি অভিযোগ করেন, তিনি তিন বছর আগে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে কানাডায় যান। সেখানে তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। জাবরির ভাষ্য, তিনি অনেক গোপন ও মারাত্মক তথ্য জানেন। তাই তাঁকে হত্যা করতে চান যুবরাজ।
তবে সৌদির কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, জাবরি নিজের অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করছেন।