গায়ত্রী গ্যামার্স পুরস্কার পাচ্ছেন সুব্রত কুমার দাস ও জয়শ্রী চ্যাটার্জী

আমেরিকার নিউজার্সি শহরের আনন্দ মন্দির ২০১৮ সালের গায়ত্রী গ্যামার্স মেমোরিয়াল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় উত্তর আমেরিকাবাসী যে দুই লেখক এবার পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁরা হলেন কানাডার টরন্টো নিবাসী লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাস এবং নিউজার্সি শহরের লেখক ও কলামিস্ট জয়শ্রী চাটার্জী। প্রশংসাপত্র ছাড়াও ওই দুই লেখকের প্রত্যেকে পাবেন ৫০০ আমেরিকান ডলার।
উল্লেখ করা যেতে পারে, সুব্রত কুমার দাস রচিত প্রবন্ধ, অনুবাদ, সম্পাদনাগ্রন্থ ও উপন্যাসের সংখ্যা ২৬। তিনি ২০০৩ সালে করা বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রথম ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস (bdnovels.org)-এর উদ্যোক্তা। অন্যদিকে জয়শ্রী চ্যাটার্জীর রয়েছে ইংরেজিতে লেখা একটি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্প সংকলন। এ ছাড়া তিনি ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’, ‘দ্য স্টেটসম্যান’ প্রভৃতি পত্রিকার নিয়মিত গল্পকার ও কলামলেখক।
আনন্দ মন্দিরের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলো গায়ত্রী গ্যামার্স মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, যার প্রধান লক্ষ্য হলো সাহিত্যে বিশিষ্টতা দানকারীকে সম্মাননা জানানো। ২০১০ সালে শুরু এই পুরস্কার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া সম্ভব হয়েছিল প্রয়াত গায়ত্রী গ্যামার্সের বিচক্ষণ স্বামী জেরী গ্যামার্সের ঐকান্তিক আগ্রহ ও অনুদানের ফলে। গায়ত্রী একজন গুণান্বিতা গ্রন্থাকার ও শিল্পী ছিলেন এবং আনন্দ মন্দির প্রকাশিত আনন্দসংবাদ ও আনন্দলিপির সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্যা ছিলেন। এই অ্যাওয়ার্ডের আওতায় বার্ষিক দুটি নগদ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়—একটি বাংলা ভাষায় লেখার জন্য আর একটি ইংরেজি ভাষায় লেখার জন্য। প্রতিটির অর্থমূল্য ৫০০ আমেরিকান ডলার মূল্যের। সঙ্গে রয়েছে প্রশংসাপত্র।
প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মনোনয়নপ্রার্থীদের প্রধান নির্ণায়ক হলো বিগত পাঁচ বছরে উত্তর আমেরিকার যেকোনো প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখার গুণমান ও উৎকর্ষ।
বলে রাখা যেতে পারে যে, আনন্দ মন্দির একটি মর্যাদাপূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। একটি হিন্দুমন্দির হিসেবে শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নয়, সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হয়। মানব জীবনের উদ্ভাসক বৈচিত্র্যময় বিষয় নিয়ে চর্চা, গবেষণা ও কর্মযজ্ঞ চলে সেখানে। সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, অঙ্ক, অর্থনীতি, সমাজ-উৎসারিত ঘটনাবলি, নাটক, সিনেমা, গান এমনকি খেলাধুলা নিয়েও সেখানে রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। বার্ষিক কয়েকটি আকর্ষণীয় ও স্পন্দনীয় অধিবেশন এবং মাসিক সাহিত্য ও আলোচনাসভা। প্রতিষ্ঠানের সযত্ন প্রচেষ্টাই হলো সমাজহিতৈষী কিছু অর্জন করা। তাদের মূলমন্ত্র হলো, “আলোচনা মানবিক ও মনের উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক”। আলোচনার পরিধি বিস্তৃত ও গভীর। বিগত কয়েক বছরে তারা বেশ কয়েকটি অধিবেশন সাফল্যের সঙ্গে সুসম্পন্ন করেছেন, যার মাঝে ছিল প্রখ্যাত গুণীজনদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, গুণমুগ্ধতা প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা ও আলোচনার মাঝে জ্ঞানার্জন। আর্থসামাজিক উন্নয়নের যাত্রায় বিদগ্ধজনদের আলোকপাত ও প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সমারোহে সম্মেলন প্রভৃতি।
পরিশেষে আনন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠানের যে মূলমন্ত্র “আলোচনা মানবিক ও মনের উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক”-এর শেকড়ে যে নীতিবাণী তা-ই সর্বাঙ্গীণ প্রয়াসের পরিচালিকা শক্তি। বিশ্বে যা কিছু সৃজনশীল সৃষ্টি, পেছনে অবশ্যই রয়েছে মুষ্টিমেয় বা বহুমাত্রিক জ্ঞানীগুণীদের আলোচনা, অধিবেশন বা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণের পরিণতি ও সুফল। জ্ঞানের আলো ধর্মে অনুবাদিত হলেতো প্রতিটি জীবনই আনন্দে উদ্ভাসিত হতে পারে।
আলোকিত ধর্ম পরিশীলন করতে চাইলে, স্বর্গসুখ, বিত্ত বা ঐশ্বর্য কিছুই প্রয়োজন হয় না। আনন্দ মন্দিরের এই অভিযোজন সমাজকে আনন্দে উদ্ভাসিত করুক ।