ট্রাম্পের আমন্ত্রণে আপাতত পুতিনের 'না'

ট্রাম্প ও পুতিন
ট্রাম্প ও পুতিন

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আপাতত ওয়াশিংটনে আসছেন না। এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের নির্দেশে বোল্টনই পুতিনকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই বছর হেমন্তে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের কোনো এক সময়ে এই সফর অনুষ্ঠিত হবে, এমন কথাও তিনি বলেছিলেন। বোল্টন জানান, হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের ‘মিথ্যা তদন্ত’।

হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের শুরুতে এই সফর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আগামী বছরের শুরুতে ম্যুলারের তদন্ত শেষ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে সিএনএনের এক সাংবাদিক—কেইটলান কলিন্স, যিনি এদিন টিভি নেটওয়ার্কগুলোর ‘পুল রিপোর্টার’ হিসেবে কাজ করছিলেন—ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, পুতিন কেন তাঁর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প অবশ্য সে প্রশ্নের জবাব দেননি। একই সাংবাদিক ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের সঙ্গে তাঁর টেলিফোন কথাবার্তার এক টেপ বাজারে ফাঁস হওয়ার ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন করেন। উভয় প্রশ্নে ট্রাম্প এতটা বিরক্ত হন যে সেই সাংবাদিকের হোয়াইট হাউসের পরবর্তী অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

পুতিন আসছেন না—এ কথা হোয়াইট হাউস থেকে জানানোর এক দিন আগেই অবশ্য মস্কো এই সফরের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। পুতিনের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকফ রয়টারকে জানান, এখন যাওয়া না হলেও ভবিষ্যতে এই দুই নেতা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ বছর শেষ নাগাদ আর্জেন্টিনায় যে জি-২০ নেতাদের বৈঠক বসছে, সেখানে তাঁদের মুখোমুখি বৈঠক হতে পারে বলে উশাকফ জানান।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে হেলসিঙ্কিতে শীর্ষ বৈঠকে তিনি মার্কিন স্বার্থ রক্ষার বদলে পুতিনের প্রতি অতি ভক্তি দেখিয়েছেন, নিজ দলের নেতাদের কাছ থেকে এমন সমালোচনায় জর্জরিত ট্রাম্প মস্কোর ব্যাপারে যেন হঠাৎ অতি কঠোর অবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি অভিযোগ করেন, মস্কো মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে, তবে তাদের হস্তক্ষেপের লক্ষ্য ডেমোক্র্যাটদের বিজয় নিশ্চিত করা। এর এক দিন পর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, আগামী নির্বাচনে মস্কোর হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠকে রাশিয়ার সাইবার হামলা ঠেকাতে ওয়াশিংটন কী ব্যবস্থা নিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক পত্রিকা ‘পলিটিকো’ প্রথম এই খবর প্রকাশ করে। তারা জানায়, মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। এখন তাঁর মত বদলের কারণ, তিনি উভয় দলের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে চান।

শুধু ট্রাম্প নন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও-ও মস্কোর ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষে কঠোর অবস্থান গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল সিনেটে এক শুনানিতে তিনি জানান, ভবিষ্যতে কোনো মার্কিন নির্বাচনে যাতে তিনি নাক না গলান, সে ব্যাপারে মস্কোর ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে। এদিন এক বিবৃতিতে তিনি ২০১৪ সালে অধিকৃত ক্রাইমিয়া থেকে সরে যাওয়ার জন্য মস্কোর প্রতি আহ্বান জানান।