ট্রাম্প এখনো ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

নির্বাচনে হেরে গিয়েও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থামছেন না। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর কথিত ভোট জালিয়াতির মামলা খারিজ হলেও সমর্থকদের মহড়া চলছে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সহিংসতায় জড়িত ছয়জন গ্রেপ্তার হওয়ার কথা জানা গেছে।

ট্রাম্প–সমর্থকেরা বলছেন, লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এ লড়াই চলবে এবং নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে ফেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পই আরও চার বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন।

চার রাজ্যের নির্বাচন বাতিল করা নিয়ে টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেলের মামলা খারিজ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চটেছেন সুপ্রিম কোর্টের ওপর। একের পর এক টুইটবার্তায় তিনি সুপ্রিম কোর্ট এবং তাঁর প্রশাসনের অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার কেন নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করলেন না, তা নিয়ে গতকাল টুইট করেন ট্রাম্প। অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন উদ্যোগ রিপাবলিকান পার্টিকে বিরাট সুবিধা দিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পৃথক টুইটবার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে দমিয়ে দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের কোনো সাহস ও প্রজ্ঞা নেই বলে তিনি টুইটবার্তায় উল্লেখ করেন।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল সকাল থেকে ট্রাম্প–সমর্থকদের জমায়েত হতে দেখা যায়। দুপরের মধ্যে ওয়াশিংটন মল এলাকা থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দফায় দফায় সমর্থকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে সমর্থকদের এমন সমাবেশের কথা জানেন না বলে টুইট করেন। সমর্থকদের সঙ্গে সংহতিও প্রকাশ করেন।

দিনের মধ্যভাগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টার নিয়ে সমর্থকদের সমাবেশের ওপর দিয়ে মহড়া দেন এবং পরে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানের দিকে ট্রাম্পের হেলিকপ্টার চলে যায়।

একপর্যায়ে হোয়াইট হাউসের কাছেই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে ট্রাম্প–সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে।

উভয় পক্ষকে ভিন্ন ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

সমর্থকদের সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মাইকেল ফ্লিন বলেছেন, ট্রাম্পই যে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট থাকছেন, এ ব্যাপারে তিনি পুরোই নিশ্চিত। ২০ জানুয়ারির আগে লড়াই–জয়ের জন্য তা থেমে গেছে মনে করার কোনো কারণ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা সিভাস্টিয়ান গোর্খা, রক্ষণশীল ধনকুবের মাইক লিন্ডেল, বরিস এপস্টেইন ও ক্যাটরিনা পিয়ারসন। তাঁরা মার্কিন সংবিধান ভালোভাবে পড়েছেন উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় তাঁরা মানবেন না।

উইসকনসিন রাজ্যে ট্রাম্প শিবিরের করা আরেকটি মামলা গতকাল রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলছেন, আদালতে তাঁর অভিযোগ শুনানিরই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন জালিয়াতির ভোটে নয়, প্রকৃত ভোটে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তাঁর জয়ের লড়াই চালিয়ে যাবেন। লড়াই সবে শুরু হলো বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

আগামীকাল সোমবার অঙ্গরাজ্যগুলো ইলেক্টোরাল ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ইলেক্টোরাল ভোটের ৩০৬টি পাওয়ার কথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে। তাঁর জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট। আসছে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে জো বাইডেনকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা।

রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের নিয়ে এখন ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন কোনো নজির না থাকলেও আইনপ্রণেতাদের দিয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে বিরোধপূর্ণ করার শেষ প্রয়াস চালাচ্ছেন তিনি। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ না নেওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া আচরণ চলবে বলেই মনে হচ্ছে।