ডিভি লটারি বন্ধ দুয়ার খুলবে কখন

আমেরিকা যেন এক টুকরো পৃথিবী। নানা বর্ণ, নানা জাতির লোকের শ্রমে-ঘামে গড়ে উঠেছে এর বনিয়াদ। গেল শতকের আশির দশকের শেষ ভাগ। নিজেদের প্রয়োজনেই মার্কিন মুলুকের কর্ণধারদের মাথায় ভাবনা এল, বাইরে থেকে লোক এনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেবেন তাঁরা। কাদের আসতে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে সবচেয়ে সহজ পথটি বেছে নেয় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ছেড়ে দেওয়া হয় লটারি। যাঁরা জিতবেন তাঁরাই পাবেন মার্কিন মুলুকের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ।
শুধু অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো নয়, পৃথিবীর অগ্রসর অনেক দেশের কাছেও আমেরিকা যেন এক স্বপ্নপুরী। ‘ওপি ওয়ান’ নামের লটারির মাধ্যমে সেই স্বপ্নপুরীর দুয়ার যখন পৃথিবীর ১৬২টি দেশের জন্য খুলে দেওয়া হলো তখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল ছেলে-বুড়োর দল। বৈধভাবে পরিবার নিয়ে আমেরিকায় থিতু হওয়ার সুযোগ কেউই ছাড়তে রাজি হননি।
২০ হাজার ভিসার জন্য আবেদন পড়েছিল ৩০ লাখ। সেই ঢেউ এসে লেগেছিল আমেরিকার একেবারের উল্টো পিঠের দেশ বাংলাদেশে। ১৯৮৯ সালের মার্চ থেকে সরকারি চাকরিজীবী, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী সবাই এক কাতারে লাইন ধরেন ডাকঘরে। খামের ওপর ‘OP-1 P. O. Box 20199 Washington, D. C.20199-9998’ এই ঠিকানা লিখে স্বপ্নবিলাসীরা পোস্টবক্সে জমা দিতে থাকেন নিজেদের আবেদন।
পরের বছর থেকে ওপি ওয়ানের পরিবর্তে ছাড়া হয় ‘ডাইভার্সিটি ভিসা’ (ডিভি) লটারি। এ লটারির আওতায় প্রতিবছরের নির্ধারিত সময়ে লটারি ছেড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তের ৫০ হাজার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হতে থাকে। তবে বাংলাদেশের জন্য বছর দুয়েক থেকে বন্ধ রয়েছে ডিভি লটারি। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সরকার বন্ধ দুয়ারটি আর খুলতেও চাইছে না। ডিভি লটারি চূড়ান্তভাবে বন্ধ করতে সরকারদলীয় দুজন সিনেটর গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিনেটে একটি বিলও উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে গত বছর জানানো হয়েছিল, এ বছর ৫০ হাজার ডিভি লটারি ছাড়া হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম অভিবাসন হারের দেশগুলো থেকে নাগরিকদের আবেদনের সুযোগ থাকছে।
এবারের ডিভি লটারির সময় আবার বাংলাদেশিদের সুযোগ থাকবে কি না, এ বিষয়ে আলাপ হলো অ্যাডভোকেট শেখ সেলিমের সঙ্গে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে এখন ডিভি লটারি বন্ধ আছে বাংলাদেশিদের জন্য। তার কারণ বাংলাদেশ আনুপাতিক হারে নির্দিষ্ট কোটা অতিক্রম করে ফেলায় এটা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আর এখন আমেরিকায় সরকারদলীয় অনেক সিনেটর চান না ডিভি লটারি থাকুক। আর ট্রাম্পের স্লোগান হলো আমেরিকা আমেরিকানদের জন্য। তাই হয়তো ভবিষ্যতে এভাবে আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আর অভিবাসীদের জন্য থাকবে না। তখন হয়তোবা তিনি ওয়ার্ক পারমিট বা বিকল্প কিছু ব্যবস্থা চালু করতে পারেন। আর স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশা রাখি, বাংলাদেশিদের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর দরজা খুলে দেওয়া হবে।