নিউইয়র্কে স্বাদযুক্ত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হচ্ছে

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো স্বাদযুক্ত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করে ১৫ সেপ্টেম্বর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ১১ সেপ্টেম্বর ভ্যাপিং নিয়ে আলোচনার জন্য একটি নীতি নির্ধারণী বৈঠক করেন। ই-সিগারেটের কারণে ফুসফুসের রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। শত শত লোক অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ সংক্রান্ত জটিলতায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও রিপোর্ট বেরিয়েছে।
খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বর্তমানে ৩০ দিনের মধ্যে পুদিনা ও মেন্থলসহ সমস্ত তামাক-স্বাদহীন ই-সিগারেট বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। ভ্যাপিং কোম্পানিগুলো পরবর্তী ঘোষণা ছাড়া তাদের স্বাদযুক্ত ই সিগারেট উৎপাদন করতে পারবে না।
মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ই-সিগারেট ‘মহামারি’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ই-সিগারেট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে চাপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ই-সিগারেটকে নতুন প্রজন্মের আসক্তির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
নিউইয়র্ক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিনি স্বাদযুক্ত ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে চান।
এ বিষয়ে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিষয়ক সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সুগন্ধিযুক্ত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ, এর দ্বারা ফুসফুসে একটি রহস্যজনক রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করেছেন ফেডারেল হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে অনেকে এ রোগে অসুস্থ হয়েছে। মারা গেছে অন্তত ছয়জন।
এ বিষয়ে অ্যান্ড্রু কুমো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মানুষের জানা দরকার যে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করছে। এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে সচেতনতা কার্যক্রম চলবে। বিভিন্ন দোকানে এ সম্পর্কিত পোস্টার পৌঁছে দেওয়া হবে। বাষ্পীয় পণ্যগুলো তৈরিতে কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে কোম্পানিগুলোকে সমন জারি করা হবে। এখন প্রধান সমস্যাই হলো যে, এই ভ্যাপিং বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তের ফলে ‘ভ্যাপিং সংক্রান্ত’ সব পণ্য নিষিদ্ধ হতে পারে। তবে কোন পণ্য ফেডারেল সরকার দ্বারা অনুমোদিত থাকলে তা অঙ্গরাজ্য সরাসরি নিষিদ্ধ করতে পারে না। নিউইয়র্কের আগেই অবশ্য অন্য কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ই-সিগারেট ব্যবহারের বিষয়ে অনুরূপ তদন্ত আগেই শুরু করেছে।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনার হাওয়ার্ড জুকার বলেন, নিউইয়র্কে ভ্যাপিং ব্যবহারের কারণে ফুসফুসের রোগে এখন পর্যন্ত ৪১ জন অসুস্থ হয়েছেন। আটজন রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তাঁদের বেশির ভাগের রক্তে ‘উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই অ্যাসিটেট’ পাওয়া গেছে, যা ফুসফুসকে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। দেখা গেছে সরাসরি ক্যানাবিস বা গাঁজাকে তেল বানিয়ে ভ্যাপিং কলামের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। ক্যানাবিস ব্যবহারের ফলে কিছু ব্যবহারকারীর শরীরের ব্যথা, তিরিক্ষি মেজাজ, পেশি ব্যথা, বিষণ্নতা—এসবের লক্ষণ দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী শুষ্ক মুখ, নিদ্রাহীনতা, মাথা ঘোরা, চোখ লাল, সকালে অস্বস্তি ইত্যাদি সমস্যায় পড়েন। হাওয়ার্ড জুকার বলেন বলেন, ‘আমাদের এ সম্পর্কে আরও তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত ভ্যাপিং বা ই-সিগারেট বন্ধ করা উচিত।’