নিউইয়র্কের ট্রেন ও বাসে বাংলা বানান সংশোধন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বহু ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১৭৬টি ভাষাভাষী শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাংলাভাষী বাংলাদেশিদের বসবাস কুইন্স বরোতে। এই বরোতে ১৩৮ ভাষাযভাষী মানুষের বসবাস বলে জানা যায়।
এত ভাষার ভিড়েও বাংলা নিউইয়র্কে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানে সংখ্যার দিক দিয়ে এখন এই নগরে ০ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী। ক্রমবর্ধমান বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের কাছে নিউইয়র্ক নগরের সেবা পৌঁছে দিতে কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষাকে তাদের সরকারি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রায় এক যুগ আগে।
ইতিমধ্যে নিউইয়র্কে বাংলা ভাষীদের কাছে নগরের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম প্রচার করতে নির্বাচিত ১০টি ভাষার মধ্যে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে কোনো সরকারি কাজে যে কেউ বাংলা সার্ভিস পাচ্ছে দোভাষীর মাধ্যমে।
আর নগর প্রশাসন তাদের সব রকম সরকারি আদেশ ও ফরম বাংলায় সরবরাহ করছে। নগর প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটেও বাংলায় তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। আর সিটির বাংলা ভাষাভাষী অধ্যুষিত এলাকাগুলোর স্কুল কলেজ, সাবওয়ে (ট্রেনে) বা বাস ও হাসপাতালে বাংলা ভাষায় নির্দেশনা ব্যবহার করছে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। সিটির জরুরি ফোন সার্ভিস ৩১১-তেও পাওয়া যাচ্ছে বাংলা ভাষায় সার্ভিস।
তবে বাংলা ভাষায় সার্ভিস চালুর পর সাবওয়ে ট্রেন, সিটি বাস এমনকি স্থানীয় নির্বাচনী প্রচারণায় ভুলভাবে বাংলাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেটা বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার কাছে অভিযোগও করেছিলেন। তাদের দাবি, দ্রুত যেন এই বাংলা ভাষায় লেখা বানান ও শব্দগুলো সংশোধন করা হয়।
এ নিয়ে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ‘নিউইয়র্কে বাসে-ট্রেনে ভুলে ভরা বাংলা’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। সংবাদ প্রকাশের পর বোর্ড অব ইলেকশনের কমিশনার ও স্যাফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা মাজেদা উদ্দিন বানান সংশোধন বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বাংলা বানানের দায়িত্ব দেন। পরে ২৩ অক্টোবর নিউইয়র্কের সাবওয়েসহ মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (এমটিএ) কোভিড-১৯–এর সচেতনতামূলক ডিজিটাল প্রচারণা সংশোধন করে নতুন বানান সংযোজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসকে মাজেদা উদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু স্থবির ছিল। তারপরও নিউইয়র্ক নগর স্পিকার কোরি জনসন ও নিউইয়র্কের সাবওয়েসহ মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (এমটিএ) চেয়ারম্যান এই কাজটি যে দ্রুততার সঙ্গে করতে পেরেছেন, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, কারণ তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বানান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে নিউইয়র্ক নগর শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার স্কুলগুলোতে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে স্কুলগুলোতে নিয়োগ পাচ্ছেন বাংলা শিক্ষকও।
শিক্ষা বিভাগ তাদের সরকারি কার্যক্রমে বাংলা ভাষাকে পুরোপুরি ব্যবহার করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা সব প্রয়োজনীয় তথ্যও বাংলায় পান।
একইভাবে নিউইয়র্ক স্টেটের মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ (ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকেল) ও তাদের কার্যক্রমে বাংলা অন্তর্ভুক্ত করায় সব ধরনের ফরম বাংলায় পূরণ করতে পারেন বাংলাদেশিরা।
এ ছাড়া নিউইয়র্কের বাংলাদেশিরা নির্বাচনে ভোটও দিচ্ছেন বাংলা ব্যালট পেপারে। অবশ্য ফেডারেল আইনের কারণে এই সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন ঘনবসতিপূর্ণ শহরেও পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া জাতীয় বা অঙ্গরাজ্য ও সিটি নির্বাচনে সরকারি প্রচারণায় বাংলা ভাষায় নির্দেশনা ও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যদিও মার্কিন ও স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারণায় বাংলা বানানে ভুল রয়ে গেছে, শিগগিরই সেই ভুল বানান ঠিক করা হবে বলেও জানান মাজেদা উদ্দিন।