নিউইয়র্কে টিকায় আগ্রহী নয় বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্ম

নিউইয়র্কের একটি গণটিকা কেন্দ্র
ফাইল ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। নিউইয়র্ক নগরের ইয়র্ক কলেজে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার নিউইয়র্কবাসীকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকাগুলো কুইন্সের মধ্যে যোগ্য জিপ কোডগুলোর বাসিন্দাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। চল্লিশোর্ধ বাংলাদেশি মার্কিনরা সানন্দে টিকা নিলেও তরুণ প্রজন্ম এই টিকায় আগ্রহী নয়।

গত সপ্তাহেই সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ছয় কোটি মানুষ কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। দুই কোটির মানুষ সম্পূর্ণ অর্থাৎ টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ—দুটিই পেয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট্র বিভাগ আগেই ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার তৈরি টিকার জরুরি অনুমোদন দিয়েছেন। এই দুটি টিকার ক্ষেত্রে রোগীদের কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ নিতে হয়। সম্প্রতি জনসন ও জনসনের এক ডোজের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য, অঞ্চল ও ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে প্রায় ১২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মে মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

৪ মার্চ নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজের কেন্দ্রে এই প্রতিবেদক নিজে টিকা নেন। এ সময় দেখা যায়, জনগণের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে থেকে ভেতরের প্রতিটি জায়গায় সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিতে ভেতরে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে লম্বা লাইনে কাউকে অপক্ষো করতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা প্রতিটি বুথেই সেবা দিচ্ছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।

মুসলিম নারী বিশেষ করে পর্দা করেন এমন নারীদের জন্য ছিল আলাদা রুম। সেখানে নারী সেনারা টিকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কর্মকর্তারা টিকা দেওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতিটি মানুষের টিকা নেওয়া কেন প্রয়োজন, এর উপকারিতা কী এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছেন। তারা বলছেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর কোনো সমস্যা না হলেও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর শরীর কিছুটা হলেও কয়েক ঘণ্টার জন্য খারাপ হতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিতে হবে। যেমন মাথাব্যথা, জ্বর ইত্যাদি। তবে প্রতিক্রিয়া সবার হবে না বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।

টিকা নেওয়ার পর পরবর্তী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা পর্যবেক্ষণে প্রত্যেকের জন্য সেখানে ১০-১৫ মিনিট বসে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা আছে। সব মিলিয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত সেবা খুব পেয়ে খুশি বাংলাদেশি মার্কিন শাহনাজ পারভীন ও তাঁর স্বামী।

কিছুদিন আগেও নিউইয়র্কের মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে কিছু সংশয়, অনভিপ্রেত আশঙ্কা, ভয় ও ভ্রান্ত ধারণা ছিল। সেটা এখনো তরুণ প্রজন্মের অনেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কথা হয় কলেজ পড়ুয়া বাংলাদেশি মার্কিন জেসমিন জামান ও তার বন্ধু এরিক বেঞ্জামিনের সঙ্গে। তারা দুজনেই কুইন্স কমিউনিটি কলেজের ফ্রেশম্যান। টিকা নিতে তারা আগ্রহী কিনা এমন প্রশ্নে তাঁরা বলেন, কোনোভাবেই এই টিকা তারা নেবেন না। তাদের আশঙ্কা, এই ভ্যাকসিন নিলে চার থেকে পাঁচ বছর পর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

কথা হয় প্রতিবেশী ফরিদা ইয়াসমিন ও নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। তাদের সন্তানেরা ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে কতটা আগ্রহী? এমন প্রশ্নে দুজনই আলাদাভাবে বলেন, তাদের সন্তানরা এই টিকা গ্রহণ করার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী নন।

মেক্সিকোর একজন নারী চিকিৎসক (৩২) ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঘটনাটি পর্যালোচনা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া এই চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় নেভো লিওন রাজ্যের একটি সরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। টিকা নেওয়ার পর তাঁর খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগ দেখা দেয়। মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫ মার্চ রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই চিকিৎসকের এনসেফেলোমেলাইটিস হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। সাধারণভাবে তীব্র ভাইরাল সংক্রমণে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে সৃষ্ট প্রদাহের সমস্যা এটি। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ওই চিকিৎসকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যার ইতিহাস রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে পাঁচ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছে।