নিউইয়র্কে লাইসেন্সহীন স্ট্রিট ভেন্ডরদের জরিমানা, আন্দোলনে ব্যবসায়ীরা
নিউইয়র্ক নগরের স্ট্রিট ভেন্ডর নামে পরিচিত ফুটপাতে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর আইনের খড়্গ নেমে এসেছে। করোনা মহামারি থেকে নগর বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যবসায়ীদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে। লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীদের জরিমানাসহ তাঁদের সব মালামাল বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। নগরের এমন তৎপরতার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনেও নেমেছেন।
ফুটপাতের এসব ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই অভিবাসী। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিও নিউইয়র্কের ফুটপাতে এমন ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য নিউইয়র্ক নগর ভেন্ডর লাইসেন্স দিয়ে থাকে। নগরের আইনে সর্বোচ্চ এমন ৮৩৫টি লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলা আছে। এ কারণে নতুন ব্যবসায়ীরা ভেন্ডর লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনই করতে পারেন না। আগে থেকে যাদের লাইসেন্স আছে, তাঁরা মালিকানা বদল করে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন। তবে লাইসেন্স ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নগরের অনেক ফুটপাতেই গড়ে উঠেছে এমন ব্যবসা-বাণিজ্য।
নিউইয়র্ক নগরের ‘স্ট্রিট ফুড’ শুধু নগরবাসীর নয়, পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। স্বল্প মূল্যে দ্রুত খাবার পাওয়ার এসব সড়ক পাশের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিনের ১৮ ঘণ্টাও চালু থাকে সড়ক পাশের এসব ব্যবসা।
সম্প্রতি এসব স্ট্রিট ভেন্ডরের ওপর নজরদারি কড়া করা হয়েছে। তল্লাশির সময় লাইসেন্স দেখাতে না পারলে সব মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারির অর্থনৈতিক সংকটে পড়া এসব অভিবাসীরা এমনিতেই বিপাকে আছেন। নগরের এমন তৎপরতার প্রতিবাদে তাঁরা আন্দোলনেও নেমেছেন।
১৬ জুন জ্যাকসন হাইটসের করোনা পার্ক সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্ট্রিট ভেন্ডররা। স্ট্রিট ব্যান্ড প্রজেক্ট নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন নগরীর সড়কপথের এসব ব্যবসায়ীরা। প্রতিবাদ সমাবেশে এ সংগঠনের নেতা কেরিনা গুটারেজ বলেছেন, নিউইয়র্ক নগর আর কত নিষ্ঠুর হবে। লাইসেন্স করার জন্য যেখানে আবেদন করার সুযোগ নেই, সেখানে লাইসেন্স না থাকার জন্য এক হাজার ডলারের জরিমানা এ নগর করতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজ্য সিনেটর জেসিকা রামোসসহ রাজ্যের কিছু আইনপ্রণেতা এসব ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে জেসিকা রামোস একটি আইন প্রস্তাবও তুলেছেন রাজ্যের আইন সভায়। জেসিকা রামোস বলেছেন, এ নগরে যারা সৎভাবে কাজ করে বেঁচে থাকতে চায়, তাঁদের নির্ভয়ে এ কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যাসেম্বলিওমেন গঞ্জালেস রাজোস বলেছেন, যে মানুষগুলো নিজেদের জীবন বিপন্ন করে নগর চালু রাখেন তাঁদের প্রতি এমন অবিচার মেনে নেওয়া যায় না। পরিশ্রমী এ মানুষগুলোর প্রতি নগরের অশ্রদ্ধা দেখানোর প্রয়াস সঠিক নয় বলে তিনি বলেছেন।
স্থানীয় একজন স্ট্রিট ভেন্ডর অ্যালেক্স জুইলেন প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমরা কোথাও যাচ্ছি না। পরিশ্রম করে নগরে কষ্টকর জীবন চালাচ্ছি। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’
সমাবেশে উপস্থিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছর থেকে চেষ্টা করেও নিজে ভেন্ডর লাইসেন্স গ্রহণ করতে পারেননি। অন্যের করা লাইসেন্স বেশি ভাড়ায় নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে পরিশ্রমী মানুষের প্রতি নগরের এ জরিমানার অবিচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।