প্রস্থান
দুপুরের আহারটা পেটের মধ্যে একটা ছোট্ট সুখ এনে দিল। হাই তোলার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি ঝিমুনিতে চোখ ছোট হয়ে এল। স্বামী একটা চুরুট ধরিয়ে শরীরটাকে মোচড় মেরে বিছানায় এলিয়ে দিল। স্ত্রী মাথার সামনে বসে আপন মনে গুনগুন করতে লাগল... দু’জনেই সুখের লগনে মগন।
একটা কিছু বলো। স্বামী বলল।
কি বলব? ইমম..ও হ্যাঁ শুনেছ সুফিয়া আকুরভা গিয়ে বিয়ে বসল ইয়ের কাছে.. কি যেন নাম...ফন তাবামবোর কাছে... দেখো দেখি কী কেলেঙ্কারি!
কেলেঙ্কারির কী হলো?
শয়তান তাবামবোর কথা কে না জানে? একটা আস্ত শয়তান। একদমই নির্লজ্জ। চশমখোর। গ্রাফের* ম্যানেজার ছিল। জোচ্চুরি করে পয়সা কামিয়েছে। এখন রেল বিভাগে আছে। লুটছে দুহাতে। বোনের পয়সা পর্যন্ত মেরে খেয়েছে। আস্ত একটা বদমাশ। এ রকম মানুষের কাছে কেউ বিয়ে বসে? তার সঙ্গে ঘর করা! এমন সতীসাধ্বী মেয়ে... শেষ পর্যন্ত ওর কাছে! এমন লোকের কাছে বিয়ে বসা! কোনো মতেই সম্ভব নয়। হোক সে কোটিপতি, হোক সে সুন্দর... তার মুখে আমি থুতু দিই। নিজের স্বামী হিসেবে আমি অমন লোককে ভাবতেই পারি না।
স্ত্রী উঠে দাঁড়াল। রাগে রাঙা মুখ... চোখে আগুন। অস্থির মনে বার কয়েক ঘরের এ মাথা সে মাথা করল।
এই তাবামবো যে এতটা নিচ, তার চেয়ে হাজার গুন নিচ আর বোকা হলো সেই সব মেয়েরা যারা এই সব ভন্ডলোকের কাছে বিয়ে বসে।
হু, তুমি মনে হয় বিয়ে বসতে না.. তো.. আচ্ছা তুমি যদি জানতে পার আমিও একটা দু’নম্বর মানুষ...কী করতে?
আমি! সঙ্গে সঙ্গে তোমায় ছেড়ে চলে যেতাম। এক মুহূর্তও দেরি করতাম না। আমি শুধুই ভালোবাসতে পারি একজন সৎ মানুষকে। আমি যদি জানতে পারতাম তুমি তাবামবোর এক শ ভাগের এক ভাগ কিছু একটা করেছ, আমি...মুহূর্তের মধ্যে...বিদায়! আদিও*!
তো..হুম... লক্ষ্মী সোনামণি আমার... জানতাম না...হেঁ হেঁ হেঁ...যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
আমি মিথ্যে বলি না। চেষ্টা করে দেখ না একবার, তখন দেখ।
প্রমাণ লাগবে? তুমি নিজেই জানো...আমি তোমার তাবামবোর চেয়ে মোটেই কম কিছু নই। শুনলে তো চোখ বড় করে ফেলবে
...আচ্ছা, আমি কত বেতন পাই?
বছরে তিন হাজার।
পাথরের যে হারটি তোমাকে গত সপ্তাহে দিয়েছি তার দাম কত? দু’হাজার... নয় কি? গতকালের পোশাকটির দাম পাঁচ শ... বাগান বাড়ি দু’হাজার... হেঁ হেঁ হেঁ। গতকাল তোমার বাবা নিল এক হাজার...
কেন বেতনের বাইরে যে আয়....
ঘোড়া...গৃহ চিকিৎসক...ধোপা দরজি। সেদিন হারালে এক শ রুবল...
স্বামী হাতের ওপরে মাথা ভর করে বিস্তারিত বলতে লাগল। পরে লেখার টেবিলের কাছে গিয়ে আরও কিছু প্রমাণ দিল।
এখন দেখ বউ... কোথায় তোমার ফন তাবামবো আর কোথায় আমি। আমার তুলনায় সে একটা ছিঁচকে চোর.. আদিও! চলে যাবে? যাও না।
এই বলে আমি শেষ করলাম। কোনো এক কৌতূহলী পাঠক হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, এর পরে কি হলো? স্বামীকে ছেড়ে স্ত্রী চলে গেল?
গেল....তবে পাশের ঘরে।
*গ্রাফ- কাউন্ট, জারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। * *আদিও- বিদায় (ফরাসি ভাষা)
অনুবাদ: তানভীর হাসান খান