প্রোগ্রেসিভ ফোরামের উদ্যোগে স্বাস্থ্য বিষয়ক জুম মিটিং

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএর উদ্যোগে ‘গ্লোবাল জুম মিটিং’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ সভায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অংশ নেন।

আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসকদের নেতা ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ। ‘স্বাস্থ্য খাতের স্বচ্ছতা ও জনগণের অধিকার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেরিল্যান্ড প্রিন্স জর্জ হসপিটাল সেন্টারের ডা. মানস কান্তি দাস। বাংলাদেশের আলোচকদের মধ্যে ছিলেন বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশের ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম, ডা. ফজলুর রহমান, ডা. আরিফুর রহমান ও ডা. রেখা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইংল্যান্ড থেকে ডা. জিন্নাহ, ডা. এনামুল, ডা. সামাদ, ডা. সন্দ্বীপ, ডা. ইকবাল প্রমুখ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফোরাম সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক। কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দিন ও ফোরামের সদস্যবৃন্দ। সভায় আলোচক ও বক্তারা স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনগণ ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও তাঁরা বিশদ আলোচনা করেন।

সভায় স্বাস্থ্য খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে শুরুতেই রয়েছে জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি। বক্তারা বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্য বাজেট প্রয়োজনের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। সঙ্গে রয়েছে দুর্নীতি। গরিব সাধারণ মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সরকারি হাসপাতালে যায় সেবা পাওয়ার আশায়। কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি, দালাল, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ সেখান থেকে খুব কম ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়।

এ ছাড়া সঠিকভাবে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতে ওষুধ সরবরাহ ও বণ্টন নিশ্চিত করা, চিকিৎসকদের চাকরির বয়স ও যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতির ব্যবস্থা, হাসপাতালগুলোয় একজন করে জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ, একই চিকিৎসক দিয়ে সব জটিল রোগের চিকিৎসা করার পুরোনো পদ্ধতির পরিবর্তন এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের চিকিৎসকদের জন্য শহরের চিকিৎসকদের তুলনায় নিরাপদ বাসস্থান, যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।

বক্তারা বলেন, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণে ধনাঢ্য ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিরুৎসাহিত করা, দেশের প্রতিটি বিভাগে সিএমএইচের মতো হাসপাতাল গড়ে তোলা এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপযুক্ত স্থানে একাধিক ‘হেলথ সিটি’ বা ‘ স্বাস্থ্য নগরী’ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা হাসপাতালগুলোর সহযোগিতা নেওয়া যায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশি চিকিৎসকদেরও প্রয়োজনীয় উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। চিকিৎসকদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লাগাম টেনে ধরতে হবে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সব অংশীজন ও সাধারণ জনগণের মতামত নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।