প্লাজমা সংগ্রহে একজন সাহিদ

ইউনাইটেড হেলথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সাহিদ করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
ইউনাইটেড হেলথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সাহিদ করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৪ লাখের বেশি মানুষের জীবন। আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ লাখের বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র আমেরিকায় এখন পর্যন্ত করোনায় বাংলাদেশিসহ মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে দেশটি।

মরণব্যাধি এই ভাইরাস মোকাবিলায় যেমন হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো, তেমনি থেমে নেই ব্যক্তি ও সামস্টিক প্রচেষ্টাও।

আমেরিকা কিংবা দেশে মহামারির এই সময় অনেক তরুণ এগিয়ে এসেছে। মানুষের সেবায় দিনরাত কাজ করছে তারা। আমেরিকায় বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি আমেরিকান বংশোদ্ভূত তরুণেরা নিরলস কাজ করছেন। বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের খাবার, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে হাত বাড়িয়েছেন এনওয়াইপিডি পুলিশ অফিসার ইফতেখার চৌধুরী, আমেরিকান নার্স সারা হোসাইন, ব্যবসায়ী হিমু আমিন, ট্রান্সফোটেক একাডেমির সিইও শেখ গালিব রহমান, এসওএস ফাউন্ডেশন এবং মুসলিম এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল রহমান, এসওএসের নির্বাহী তালহা ইয়ামীন, মূলধারার রাজনীতিক জয় চৌধুরীর মতো তরুণেরা।

আমেরিকার মতো দেশের তরুণেরাও বিপদাপন্ন মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। মার্চের শুরুতে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তখন থেকে এই ভাইরাসের আতঙ্ক সবার মধ্যে। এর মধ্যে গণমাধ্যমে একে একে খবর প্রকাশ হয়, করোনার উপসর্গ থাকায় সন্তান মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে। করোনা রোগীর পাশে নেই স্বজনরা। মৃত্যুর পরেও পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেনি!

ঠিক তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে একদল তরুণ বেরিয়ে আসে। মহামারির মধ্যে নেমে পড়ে মানবতার সেবায়। মুমূর্ষু রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করায়, চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখে। এমনকি মৃত্যু হলে স্বজনরা এড়িয়ে গেলেও তারা পাশে থেকে লাশ সৎকার করছে। এদেরই একজন ইউনাইটেড হেলথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সাহিদ আহমেদ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন সাহিদ ও তার দল। শুধু হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করে থেমে থাকেনি তারা।

এরপর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্লাজমা থেরাপি শুরু হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় বিপত্তি ঘটে। সচেতনতার অভাবে অনেকের ইচ্ছে থাকার পরেও প্লাজমা দিচ্ছেন না।

ফলে চাহিদার অনুপাতে ১০ শতাংশেরও কম রোগী প্লাজমা থেরাপির সুযোগ পাচ্ছেন। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেননি সাহিদের। তারা করোনা রোগীকে প্লাজমা দিতে করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে নামেন। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ৩১ মে ফেসবুকে একটি প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক গ্রুপ) চালু করা হয়। করোনা যোদ্ধা তরুণ সাহিদ আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ফেসবুক ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘প্লাজমা ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। অল্প সময়ে প্ল্যাটফর্মটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

গত মাসের শেষ দিনে যাত্রা শুরু করলেও ইতিমধ্যে সাহিদের এই উদ্যোগে দুই লাখের বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছে। সরাসরি প্লাজমা ডোনারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে। প্ল্যাটফর্মটিতে ডাক্তার, শিক্ষার্থীসহ অনেকেই যুক্ত হয়েছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।এই উদ্যোগের সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। তারা করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় নানা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে করোনাকালে রক্ত পাওয়া খুব দুরূহ হয়ে পড়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা তো বলে–কয়ে আসে না। তাই এই সময়ে গ্রুপ থেকে রক্তও ম্যানেজ করে দেওয়া হচ্ছে।

ক্যাপ: ইউনাইটেড হেলথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সাহিদ করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।