বস্তুর বিচিত্র দশা বর্ণনার স্বীকৃতি তিন পদার্থবিদের

মাইকেল কোস্টারলিট্জ
মাইকেল কোস্টারলিট্জ

বস্তু যখন চরম দশায় থাকে, তখন তার পরমাণুগুলো বিচিত্র বা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। এই বৈশিষ্ট্যই পদার্থের অতি পরিচিত তিন অবস্থাকে (কঠিন, তরল ও বায়বীয়) পূর্ণতা দেয়।
খুব বেশি তাপে, অত্যন্ত ঠান্ডা অবস্থায় অথবা অতি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে পদার্থের নানা রকমের অস্বাভাবিক দশা দেখা দেয়, যেমন সুপার কন্ডাক্টর বা সুপার ফ্লুইড। তখনই বস্তু বা পদার্থের বিচিত্র সব বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এসব বৈশিষ্ট্য পাল্টায় পর্যায়ক্রমে।
অতি পরিচিত তিন অবস্থার বাইরে পদার্থের এই অস্বাভাবিক অবস্থার এই রূপ প্রকাশ করে ‘অজানা এক জগতের দুয়ার খুলে দিয়েছেন’ তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেন। তবে তিনজনেরই জন্ম যুক্তরাজ্যে। নাম ডেভিড থুলেস, ডানকান হ্যালডেন ও মাইকেল কোস্টারলিট্জ। পদার্থবিদ্যায় এ বছরের নোবেল পুরস্কার যৌথভাবে তাঁরাই পেয়েছেন। সেই সুবাদে ভাগ করে নেবেন ৯ লাখ ৩৭ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ।
তাঁদের গবেষণাকাজের সুফল কী হবে? উত্তরটা হলো, ইলেকট্রনিকসের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের উন্নতি হবে। সুগম হবে অত্যন্ত দ্রুতগতির কম্পিউটার বা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ।

ডেভিড থুলেস
ডেভিড থুলেস

নোবেল কমিটি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে গতকাল মঙ্গলবার এবারের বিজয়ী তিন পদার্থবিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে। তাঁদের কাজটা পুরোনো হলেও তার প্রয়োগের ধরনটা নতুন। বিজয়ীদের একজন অধ্যাপক হ্যানডেন বলেন, ‘আমি অত্যন্ত বিস্মিত এবং তৃপ্ত। কাজটা অনেক আগের। তবে সম্প্রতি সেই মূল কাজের ভিত্তিতে এসেছে বেশ কিছু চমৎকার নতুন আবিষ্কার, হয়েছে সেগুলোর সম্প্রসারণও।’
অতিপরিবাহী, অতিতরল এবং সরু চৌম্বক ফিল্মের মতো পদার্থের অস্বাভাবিক দশা ব্যাখ্যার জন্য তিন বিজ্ঞানীই গণিত ব্যবহার করেছেন। কোস্টারলিট্জ ও থুলেস বস্তুর মসৃণ বা চ্যাপ্টা দশার কারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বস্তুর ভেতরে-বাইরে অত্যন্ত সরু স্তরগুলোকে দ্বিমাত্রিক বিবেচনা করা যেতে পারে। এটা তিন মাত্রার (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) সঙ্গে মেলে না। বাস্তবতাকে সাধারণত ত্রিমাত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই ব্যাখ্যা করা হয়। হ্যালডেনের গবেষণার বিষয় ছিল বস্তুর অত্যন্ত সরু সব তন্তু নিয়ে, যেগুলোকে একমাত্রিক বিবেচনা করা যেতে পারে।

ডানকান হ্যালডেন
ডানকান হ্যালডেন

নোবেল কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিলস মার্টেনসন বলেন, বিভিন্ন বস্তুর ব্যাপারে আমাদের বোধ এবং নিয়ন্ত্রণের ওপরই কম্পিউটারের মতো এ যুগের অগ্রসর প্রযুক্তিগুলো নির্ভর করছে। এ বছরের নোবেলজয়ীরা তাঁদের তাত্ত্বিক কাজের মাধ্যমে বস্তুর কিছু অপ্রত্যাশিত আচরণ ও নিয়ন্ত্রণ আবিষ্কার করেছেন। টপোলজি নামের একটা প্রতিষ্ঠিত গাণিতিক ধারণা দিয়ে সেই আবিষ্কার বর্ণনা করেছেন তাঁরা। ব্যাখ্যা করেছেন পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ধাপে ধাপে পরিবর্তনের (ফেজ ট্রানজিশন) ধরন। এ কাজের ফলে নতুন নতুন বস্তুর নকশা তৈরির সুযোগ ঘটেছে। ভবিষ্যতের নানা প্রযুক্তির জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডেভিড থুলেসের জন্ম ১৯৩৪ সালে স্কটল্যান্ডের বিয়ার্সডেনে। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ডানকান হ্যালডেনের জন্ম লন্ডনে ১৯৫১ সালে। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। আরেক বিজ্ঞানী মাইকেল কোস্টারলিট্জ জন্ম নিয়েছেন স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনে। তিনি এখন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।