বিচ্ছেদের ক্ষতি আর নিতে চান না মার্কিনরা!

আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও তার সাবেক স্ত্রী ম্যাককেঞ্জি বেজোসের মধ্যে বহুল আলোচিত বিচ্ছেদের পর আমাজনের শেয়ারে প্রভাব পড়েছে। গত জানুয়ারিতে তাদের ২৫ বছরের বিয়ের বিচ্ছেদ ঘোষণা হয়। এরপর আমাজনের শেয়ার ১৯ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি জেফ বেজোস দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, জেফ এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, যাঁর মোট সম্পদের মূল্য ১২৩.১ বিলিয়ন ডলার। এ সম্পদের মধ্যে ৩৯.৭ বিলিয়ন তাঁর স্ত্রী পেয়েছেন। লাখ লাখ আমেরিকান মধ্যবিত্তের ঘরে এই বিচ্ছেদ বা বিভক্তির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
জরিপে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে আমেরিকায় ৫০ বছর বয়সে বিচ্ছেদের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিলিয়নিয়ারের স্ত্রীরা বিবাহ বিচ্ছেদে বেশি উপকৃত হয়।
একাডেমিক ডকুমেন্ট গবেষণায় দেখা গেছে, বিচ্ছেদে মানুষের শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যর ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি বিচ্ছেদ বা তালাকপ্রাপ্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছর জার্মানিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘বিবাহবিচ্ছেদের কারণে, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচ্ছেদে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও জীবন বিধ্বংসী বিষয় কাজ করে। খুব ধনী ব্যক্তিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই, মানসিকভাবে কিছু মানুষ বিরক্তিকর ও নোংরা পথে শান্তি খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে। নেশায় আসক্ত হওয়া বা বারে যাওয়া বেড়ে যায়।
বলিউড গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও সহকারী পরিচালক সুসান ব্রাউনের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়েছে, তারা তাদের স্বামী বা স্ত্রী মারা যাওয়ার চেয়ে বেশি বিষণ্নতা ও উচ্চ মাত্রার রক্তচাপে ভোগেন।
৫০ বছর বয়সে তালাকপ্রাপ্ত হলে আপনার সম্পদ ৫০ শতাংশ ছাড়তে হতে পারে। ব্রাউন ও তার সহকর্মীদের প্রকাশিত গবেষণায় ১৯৬০ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী ২০ হাজার আমেরিকানের দীর্ঘস্থায়ী জরিপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেকোনো বিবাহবিচ্ছেদ একটি পরিবারের সম্পদকে বিভক্ত করে ফেলে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ হলে আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হয়, আয় বাড়ছে। এটাও ভুল। তখন মেয়েদের নিজের আয় কমিয়ে দিতে হয়। এটিও অর্থনৈতিক পতন।
গবেষকেরা জীবনযাত্রার মান দেখেছেন, পরিবারের আকার অনুযায়ী সামঞ্জস্যযুক্ত যে আয় বিচ্ছেদের পর তা ভাগ হয়ে যায়। একক প্রাপ্তবয়স্কের একক পিতা-মাতার চেয়ে কম আয়ের প্রয়োজন, যা এখনো দুই সন্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। বিচ্ছেদের কারণে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাগ হয়ে যায়। এমনকি বন্ধও হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়সের পর যে সব নারী বিবাহ বিচ্ছেদে গেছে, জীবনযাত্রার মান ৪৫ শতাংশ নিচে নেমে গেছে। আমেরিকার ৬৩ বছর বয়সী বা তার ওপরের তালাক প্রাপ্ত নারী বা পুরুষদের ২৭ শতাংশ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে বিধবাদের অবস্থাও একই করম। তাদের কর্মজীবনে শেষের দিকে বৃদ্ধ আমেরিকানরা কেবল বিবাহবিচ্ছেদের কারণে ভাগ হয়ে যাওয়া আর্থিক ক্ষতি আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার সময় পায় না।
বিচ্ছেদের পর প্রায় ২২ শতাংশ নারী ও ৩৭ শতাংশ পুরুষ আবার বিয়ে করে তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। ৬৩ বছরের বয়স্ক নারীদের অর্থনৈতিক সুবিধা ২৬.৯ শতাংশ আর ১১.৪ শতাংশ পুরুষ ভীষণ রকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। গবেষণায় দেখা যায়, কেবল ৩ শতাংশ দম্পতি আবার সংসার শুরু করে। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স্ক নারীদের সংখ্যা কম। সিনিয়র নারীদের সোশ্যাল সিকিউরিটির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত রাখা উচিত বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই নিয়মও ক্ষেত্র বিশেষে অনেক বিচ্ছেদপ্রাপ্ত নারীদের ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেয় না। এই সিস্টেমে কেবল বিয়ে করে যারা টানা ১০ বছর একই স্বামীর সংসার করে, কেবল সে সব নারীর জন্য সুবিধাগুলো প্রসারিত করা হয়।
আমাজনের মতো বড় শেয়ার যেমন ভাগ হয়। তেমনি ছোট বড় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও ভাগ হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সম্ভবত এ কারণেই বর্তমান আমেরিকানদের মধ্যে বিয়েতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে এবং বেশির ভাগ দম্পতি দেরিতে সংসার শুরু করছে।