বীরমাতা জাহানারা ইমাম

জাহানারা ইমাম
জাহানারা ইমাম

ত্যাগ–তিতিক্ষার সমুজ্জ্বলে যে নাম উদ্ভাসিত, যে নাম স্বদেশ প্রীতিতে অগ্নি উজ্জ্বল সে নাম জাহানারা ইমাম। তিনি এক মহীয়সী নারী। তাঁর নিজের কষ্ট, ব্যথার ডায়েরি একাত্তরের দিনগুলো একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি। সব সন্তানহারা মায়ের অন্তরের আবেগ এখানে উৎসারিত হয়েছে।
জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম পরিবারে। ডাক নাম জুডু। জুডু নামের এই কিশোরী বালিকা কুড়িগ্রাম শহরজুড়ে সাইকেল চালাতো। বাম রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মুকুল ফৌজ সংগঠনের সঙ্গে কাজ করত। ম্যাজিস্ট্রেট বাবার সংগ্রহে রাখা দেশি-বিদেশি বই, পত্রপত্রিকা পড়ত। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ই পরিচিত হয়েছিল টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি, শেক্সপিয়ারের লেখালেখির সঙ্গে। কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাস করে কলকাতার লেডি ব্রাবোন কলেজ থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন শুরু করেন ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ সালে স্বামী শরিফুল ইমামের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নেন। ১৯৫১ সালে প্রথম সন্তান রুমির জন্ম হয়। ষাটের দশক থেকে জাহানারা ইমাম একটু একটু করে লেখালেখির সঙ্গে জড়িয়ে যান। ১৯৬৪-৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রথম। পরে ১৯৭৭ সালে আবার স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র যান। একাত্তরের দিনগুলি তার একটি মর্মস্পর্শী রচনা। হৃদয় থেকে উঠে আসা কষ্ট, পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম নির্যাতন, ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ ঢাকার লোমহর্ষক দিনগুলোর কথা লিপিবদ্ধ করেন।
ডায়েরির আকারে লেখা এই বইটি যতবারই পড়ি ততবারই আবেগতাড়িত হই। অশ্রু আপ্লুত হই।
‘...রুমির সঙ্গে কয়েকদিন ধরে খুব তর্ক–বিতর্ক হচ্ছে। ও যদি ওর জানা অন্য ছেলেদের মতো বিছানায় পাস বালিশে শুইয়ে বাবা–মাকে লুকিয়ে পালিয়ে যুদ্ধে চলে যেতো, তাহলে একদিক দিয়ে বেঁচে যেতাম। কিন্তু ওই যে ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছি, লুকিয়ে বা পালিয়ে কিছু করবে না। নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েছি। রুমি আমাকে বুঝিয়েই ছাড়বে, সে আমার কাছে মত আদায় করেই ছাড়বে। কিন্তু আমি কি করে মত দিই? রুমির কি যুদ্ধ করার বয়স? এখনত তার লেখাপড়ার সময়...
ছেলের সঙ্গে বুঝতে বুঝতে একসময় একসময় ছেলের কথাই মেনে নিলেন।
‘ঠিক আছে তোর কথাই মেনে নিলাম। দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি। যা তুই যুদ্ধে যা।’
এই বইটি লেখা শুরু হয়েছিল ১ মার্চ ১৯৭১–এ, আর শেষ হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। নতুন প্রজন্মের যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সামগ্রিক অবস্থা জানতে আগ্রহী, তারা এই বইটি পড়লে ধারণা পাবে। তিনি শুধু রুমিকে যুদ্ধে পাঠিয়ে ক্ষান্ত ছিলেন না। প্রায় সময় তাঁর এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ি কণিকায় আসত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা। তিনি তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। অসুস্থদের সেবা দিতেন। নিজের ছেলের মতো স্নেহ করতেন। অতিথি কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ জমিয়ে রাখতেন। যাতে করে হঠাৎ এসে গেলে খালি মুখে তাদের যেন ফিরে যেতে না হয়। ওষুধ, দেশলাই, ওয়াটারপ্রুফ লাইটার—এসব সংগ্রহ করে প্যাকেট করে রেখে দিতেন। যখনই কোন মুক্তিযোদ্ধা আসত তাদের দিয়ে সেগুলো রুমি ও তার সহযোদ্ধাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন।
‘প্রায় গ্রীনরোডে গাড়ি পৌঁছে গেছে। এমন সময় রুমির হঠাৎ চোখে পড়ল, একটি মিলিটারি জিপ তাদের পিছু নিয়েছে। সে চেঁচিয়ে উঠল, ‘লুক লুক আ জিপ ইজ ফলোয়িং আস’ এবং সঙ্গে সঙ্গে স্টেনের বাঁট দিয়ে আঘাত করে পেছনের কাচ ভেঙে ফায়ার শুরু করে জিপটির ওপর। একই সঙ্গে রুমির দুপাশ থেকে বদি আর স্বপনও ফায়ার শুরু করে ভাঙা কাচের ফাঁক দিয়ে। কজন মরল তার হিসেব না পেলেও জিপের ড্রাইভার যে প্রথম চোটেই মরেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ব্রাশফায়ারের সঙ্গে সঙ্গেই জিপটি হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোড়ের ল্যাম্প পোস্টে গিয়ে ধাক্কা খেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে উল্টে গেল।’
পটভূমি ১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট।
এভাবেই ১৯৭১ বিচ্ছু বাহিনী ছোট ছোট অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিকাশের ভিত গড়ে তুলেছিল। আর এই বিচ্ছু বাহিনীকে আশ্রয় দিয়ে, সাহায্য করে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে পৃথিবীর মানচিত্রে ঠাঁই করে নেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন যারা, তাঁদেরই একজন হচ্ছেন বিচ্ছু বাহিনীরই এক বিচ্ছুর মা, আমাদের সবার পরম শ্রদ্ধেয় শহীদ জননী বীরমাতা জাহানারা ইমাম।
ওই দিন অপারেশন সেরে এসে রুমি জাহানারা ইমামকে বলে, ‘আম্মা পাশের গলিতে এক বাড়িতে অস্ত্র রেখে এসেছি। এক্ষুনি নিয়ে আসতে হবে। তোমাকে যেতে হবে গাড়ি নিয়ে। মহিলা ড্রাইভার দেখলে ওরা গাড়ি থামাবে না আশা করা যায়। আমি যাব তোমার সঙ্গে।’ এরপর জাহানারা ইমাম কম্পিত বুকে ছেলেকে পেছনে বসিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন যেখানে রুমিরা অস্ত্র রেখে এসেছে। বুক হিম ধরা নিস্তব্ধতার ভেতর গাড়ি পার্ক করে গাড়িতেই বসে রইলেন। ঝিমঝিম করে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির শব্দে প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছে, এই বুঝি পাকিস্তানি সেনারা এল। বস্তাভর্তি অস্ত্র নিয়ে রুমি ফিরে এলে গাড়ির পেছনের বুটি খুলে দিলেন। বুকে প্রচণ্ড ধুক্ধুকানি। হাত-পায়ে গিটছাড়াভাব। তা সত্ত্বেও গাড়ি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছেলেকে অস্ত্রসহ নিরাপদে বাড়ি নিয়ে এলেন। বাড়ি ফিরে এসে হাতে পায়ে জোর ফিরে পেলেন।
ধুকধুকানির বদলে এখন উত্তেজনার জোয়ার। জীবনের প্রথম অস্ত্র দেখলেন। তারপর আবার অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করলেন।
এখানে আমরা এক দুঃসাহসী মাকে প্রত্যক্ষ করি, যিনি শুধু তার প্রাণপ্রিয় সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি। সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণও করেছেন সাবলীলভাবে।
২৯ আগস্ট ১৯৭১।
রুমি তার মাকে বলছে-আম্মা মাথাটা কেন জানি খুব দপদপ করছে। ভালো করে বিলি করে দাওতো।’ জাহানারা ইমাম ছেলের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন, এমন সময় রেডিওতে ক্ষুদিরামের ফাঁসির সেই বিখ্যাত গানের কয়েকটা লাইন।
-‘একবার বিদায় দে মা
ঘুরে আসি
ওমা হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে জগৎবাসী’
বেজে উঠল। তখন রুমি বলল
-‘কী আশ্চর্য আম্মা, আজকেই দুপুরে এই গানটা শুনেছি। একই দিনে দুইবার গানটা শুনলাম।
না জানি কপালে কী আছে!’
ওই রাতেই দেশপ্রেমিক নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাঝরাতে এলিফ্যান্ট রোডের কণিকা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে গেল রুমি, জামী, ওদের বাবা শরীফ ইমাম, কাজিন হাফিজ ও মাসুমকে।
আমি খানিকক্ষণ স্তম্ভিতের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম শূন্য পোর্চে। একবার গলির মাঝখানে দাঁড়াই। আবার পোর্চে ফিরে আসি। মাঝে মাঝে বারান্দায় বসি। আধঘণ্টা গেল। এক ঘণ্টা গেল। দেড় ঘণ্টা গেল। ওরা ফিরে আসে না। ক্যাপ্টেন কাইয়ুম বলেছিল, ‘আধঘণ্টা পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবে।’
‘আমিও সেই বিশ্বাসে ঘর বার করে পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম।’
এর মধ্যে লেখিকা তাঁর জীবনের সবচেয়ে করুণতম সময়ে তাঁর যে কষ্ট, সেই কষ্টের অনুভূতি খুবই মর্মস্পর্শীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
দুদিন–দুরাত অমানুষিক অত্যাচার আর জেরার পর ৩১ আগস্ট দুপুর নাগাদ রুমি ছাড়া সবাইকে ছেড়ে দিল। রুমিকে তেজগাঁও ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জাহানারা ইমামের দুটো বনি প্রিন্সের একটি অর্থাৎ রুমি আর ফেরেনি। ২৯ আগস্টের পর লেখা প্রতিটি পাতায় রয়েছে রুমির জন্য লেখিকার হৃদয়ের রক্তক্ষরণের গাঁথা। এখানে আবার তিনি তাঁর সব অসাধারণত্ব হারিয়ে হয়ে যান শাশ্বত বাঙালি মা। যিনি নিতান্তই সাধারণ। সন্তানের শোকে মুহ্যমান এক মা। নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে এই মা প্রতিদিনই অপেক্ষা করে এই বুঝি তাঁর রুমি এল। অথবা তার কোন খবর। সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যান রুমিকে অথবা রুমির কোনো খবর পেতে। রুমির কোনো খবর না পেয়ে দিন গড়িয়ে যাচ্ছিল।
এ অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বরে শরীফ ইমাম সাহেব হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো পিজি হাসপাতালে। পরাজয়ের পূর্ব মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তখন ঢাকায় কারফিউ জারি করেছে। আর রাতে লাগাতার ব্ল্যাকআউট। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আলবদর বাহিনীর বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড। এমনি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ঢাকার পিজি হাসপাতালে এক অন্ধকার কেবিনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন শরীফ ইমাম। আর লাশের মাথার কাছে বসে রইলেন পাথরের মতো নিথর হয়ে পুত্রহারা গৃহবধূ জাহানারা ইমাম। এত শোকেও ভেঙে পড়েননি তিনি।
১৪ ডিসেম্বর বোমাবর্ষণের পর আশপাশের বাড়ির আহতরা এসে আশ্রয় নিয়েছিল কণিকায়। তাদের ফার্স্ট এইড দিয়ে, বেশি আহতদের মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তাদের সবার খাবারের বন্দোবস্ত করলেন জাহানারা ইমাম। এত লোকের খাবার ব্যবস্থা করতে গিয়ে একবারও অতিথি কক্ষে রাখা রসদ সম্ভারে হাত দিলেন না; যা সন্তর্পণে জমিয়ে রেখেছেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কত দৃঢ় তাঁর মনোবল।
১৭ ডিসেম্বরের কথায় লিখেছেন, ‘২৫ মার্চ যে ফ্ল্যাগ পোলটায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আবার নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেই ফ্ল্যাগ পোলটায় আজ আবার সেদিনের সেই পতাকাটাই তুললাম। সবাই কাঁদতে লাগলেন। আমি কাঁদতে পারলাম না। জামীর হাত মুঠিতে চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম।’
উপন্যাসটি শেষ করে মনে পড়ে যায় ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’–এ কথা। মা–এর দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথমেই দেখা যায় মায়ের আর কান্না আসে না। হৃৎপিণ্ড শুকিয়ে যেন কুঁকড়ে গেছে। সেই মা চরিত্রের অপূর্ব মিলন ঘটেছে যেন জাহানারা ইমামের ক্ষেত্রে। একজন শহীদ রুমির মা ক্রমশ যেন লাখো শহীদের মা হয়ে উঠছিলেন। তিনি তাঁর রুমিকে হারানোর শোক মেনে নিয়েছিলেন, যদিও রুমি ছিল তাঁর বড় সাধের সন্তান। যদিও তাকে হারিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ দেশের লাখো মা যদি তাদের পুত্র হারানোর শোক সহ্য করতে পারে, তাহলে তিনি কেন পারবেন না?
প্রখ্যাত আবৃত্তিকার দম্পতি কাজী আরিফ ও প্রজ্ঞা লাবণির ইন্দিরা রোডের বাড়িতে ৯০–এ আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই মহীয়সী নারীর সাক্ষাৎ লাভের। তখন দেখেছিলাম, তাঁর ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল সৌম্য শান্ত চেহারা। সেখানে কোন হতাশা কিংবা গ্লানি ছিল না। তাঁর কথায়ও ছিল না কোনো আক্ষেপ। পরে জাহানারা ইমামের পুত্র হারানোর শোক সবার অজান্তেই ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হলো হত্যাকারী ও তার সমর্থকগোষ্ঠী প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষে। জাহানারা ইমাম জীবন নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। একদিকে নিজ দেহে ক্যানসারের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে জাতির দেহে লেপ্টে থাকা দুরারোগ্য ক্যানসারের বিরুদ্ধে। তিনি স্থির করেছিলেন, বাংলাদেশ ঘাতকের থাবা থেকে মুক্তি পাবে তখনই, যখন প্রত্যেক তরুণই এক একজন রুমির তেজকে ধারণ করে গেরিলা হবে। বস্তুত তিনি তাঁর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। বাঙালি মায়েরা কত সাহসী, কত শক্তিমান, কত ত্যাগী, মহান হতে পারেন তারই প্রমাণ দিয়ে গেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তাঁর কাছ থেকে, তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমাদের মাঝে আর নেই। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন আমেরিকার এক হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শিল্পের সুষমায় ভরা নান্দনিক পৃথিবীর স্বপ্নে অনাগত দিনের স্বপ্ন গড়ার আগেই মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন রূঢ় বাস্তবতায় স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছে যে মহীয়সী রমণীর, তাঁর মৃত্যু নেই। হতে পারে না। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, যত দিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে, বাংলার মাটি ও মানুষের অস্তিত্বে অমর হয়ে থাকবেন বীরমাতা জাহানারা ইমাম। বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার ত্যাগ ও অবদানের কথা।