মানসিক চাপে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে

অতিরিক্ত চিন্তা ও মস্তিষ্কের গভীরে একটি অংশে অনবরত স্নায়বিক চাপের কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ল্যানসেট-এর একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
তিন শ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে একটি মার্কিন গবেষকদল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় শত্রু স্ট্রেস বা প্রবল মানসিক চাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একদল গবেষক এ গবেষণাটি করেন। তাঁরা দেখতে পান যেসব লোক মস্তিষ্কের অনুভূতি-সংক্রান্ত অংশের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করেন, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি এবং তা অন্যদের চেয়ে আগে হতে পারে। হৃদ্রোগের জন্য ধূমপান ও উচ্চ রক্তচাপ যতটা ঝুঁকিপূর্ণ, মানসিক চাপও ততটাই। তাই হৃদ্রোগের ঝুঁকিতে আছেন এমন ব্যক্তিদের মানসিক চাপ কম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসাবিদেরা।
আগে থেকেই ধারণা করা হয়, মানসিক চাপ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা দেখতে পান, মানসিক চাপ রক্তনালি এবং মস্তিষ্কের যে অংশে অনুভূতি (রাগ, ক্ষোভ, ভয়) কাজ করে সেখানে চাপ সৃষ্টি করে।
মানুষের মস্তিষ্কের গভীরে অ্যামিগডালা অংশে অনুভূতির সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ও অনবরত আনন্দ, রাগ ও ভয়ের সময় তা সাড়া দেয় এবং অস্থিমজ্জায় অতিরিক্ত শ্বেতকণিকা তৈরির জন্য বার্তা দেয়। পরিণতিতে তা রক্তনালিতে প্রদাহ তৈরি করে যাতে হার্ট অ্যাটাক, বুকে ব্যথা ও স্ট্রোক হয়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা দুইভাবে গবেষণাটি চালান। প্রথমে তাঁরা ২৯৩ জন রোগীর মস্তিষ্ক, অস্থিমজ্জা এবং রক্তনালি স্ক্যান করেন। তাঁদের চার বছর ধরে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এঁদের মধ্যে ২২ জন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দেখা যায়, তাঁরা মস্তিষ্কের অনুভূতির অংশে অতিরিক্ত চাপ নিয়েছেন।
গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে ১৩ জন রোগীর ওপর মানসিক চাপ এবং প্রদাহ সৃষ্টি হওয়া নিয়ে কাজ করা হয়। এ গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা অ্যামিগডালা অংশে অতিরিক্ত চাপ নেন, তাঁদের শরীরে ও রক্তনালিতে প্রদাহ বেশি হয়।
গবেষকদলের প্রধান এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ তাওয়াকুল বলেন, ‘আমাদের গবেষণা স্নায়বিক চাপ ও হৃদ্রোগের মধ্যে সম্পর্ক একেবারে নতুন করে দেখার চেষ্টা করেছে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে, পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও মানুষ ভালো থাকে।’
নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলজে বট বলেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ, চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এবং দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসের ফলে ধীরে ধীরে মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।