মার্কিন নির্বাচনের ফলে কেন এত দেরি?

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে চূড়ান্ত ফল আসতে আরও দেরি হতে পারে।রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে এখনো ভোট গণনা চলছে। পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় ভোট গণনা এখনো শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে আলাস্কাতেও।

নির্বাচনে ভোট গণনার যেন শেষ নেই। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল আসতে কতটা দেরি হতে পারে, দেরির কারণ কী তা নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে গার্ডিয়ান। বলছে, নির্বাচনের ফলাফল আসতে কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।

সাধারণত যা হয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পপুলার ভোটে জয় পাওয়া যায় না। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জয়ী হতে হয়। হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় যেতে প্রয়োজন ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট।

বেশির ভাগ নির্বাচনেই ফলাফল স্পষ্ট থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের আগাম আভাস দেয়। চূড়ান্ত ফল গণনার ওপর ভিত্তি করে না হলেও সেটা অনুমানের ভিত্তিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই অনুমান সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।

এর অর্থ হলো ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সঠিক হিসাব করা সম্ভব এবং জয়ী ঘোষণা করাও সম্ভব। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।

এবার যা ব্যতিক্রম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোটার এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আগাম ভোট ছিল ৩৪ শতাংশ । এসব ভোটের মধ্যে ডাকযোগে ভোটও রয়েছে।

ডাকযোগে ভোট গণনার প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতিতে চলে। এর কারণ হলো, ভোটার ও সাক্ষীর সই, ঠিকানা যাচাই করতে হয়। গণনা মেশিনে ভোটগুলো কমিয়ে আনা হয়। কিছু অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনের অনেক আগে থেকেই এই যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তবে এ বছর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে এ ধরনের ভোট গণনার আগাম প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ভোট গণনার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতির জন্য নতুন আইন চালু করতে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন আইনপ্রণেতারা। এ কারণে পেনসিলভানিয়ার পিটার্সবার্গ, ফিলাডেলফিয়া এবং এ রকম আরও অনেক শহরে কাজ জমে গেছে। এ বছর এখানে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ডাকযোগে ভোট এসেছে। ২০১৬ সালে ডাকযোগে ভোট ছিল প্রায় ৬ হাজার।

যেখানে যা চলছে

এপি ও ফক্স নিউজ অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জো বাইডেন জয়ী বলে ধরে নিয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রচার শিবির বলছে এই হিসাব করার সময় এখনো আসেনি।

জর্জিয়ায় চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এখানকার সম্ভাব্য ভোটের ৯৯ শতাংশ গণনা হয়ে গেছে। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে চার হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

নেভাদা অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী ১০ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যত ভোট আসবে সব গণনা করা হবে। এর অর্থ হলো সপ্তাহজুড়ে ভোট গণনা চলবে।

নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প বেশ জনপ্রিয়। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে ভোট গণনা চলবে। অঙ্গরাজ্যটির কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে নির্বাচনের পুরো ফলাফল আসতে আগামী সপ্তাহ হয়ে যেতে পারে।

বিবিসির খবর অনুযায়ী, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে বাইডেন প্রায় ২২ হাজার ভোটে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন। পেনসিলভানিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আশা করছেন শুক্রবার রাতের মধ্যেই বেশির ভাগ ভোট গণনা শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে নির্বাচনে ‘প্রভিশনাল ভোটের’ সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ডাকযোগে ভোট দিতে বলার পরে যাঁরা সিদ্ধান্ত বদলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ যাচাই–বাছাইয়ের প্রয়োজন হয়।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

নির্বাচনে ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প। মামলাও করেছেন। জর্জিয়ার মামলায় ট্রাম্প শিবিরের অভিযোগ ছিল, দেরিতে আসা ৫৩টি ব্যালট আগে আসা ব্যালটের সঙ্গে মেশানো হয়েছিল। মিশিগানে ভোট গণনা বন্ধের আশায় ট্রাম্পের প্রচার শিবির মামলাটি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ও জর্জিয়ায় ট্রাম্প শিবিরের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন স্থানীয় আদালতের বিচারকেরা। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার অঙ্গরাজ্যটির নির্বাচন ও এর ভোট গণনাপদ্ধতি নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন।