যুক্তরাষ্ট্রের এপার পুড়ছে ওপার ভাসছে

নিউইয়র্ক ভাসছে বন্যায়। আর ক্যালিফোর্নিয়া পুড়ছে দাবানলে
ছবি: এএফপি ও রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের এক পাশে ক্যালিফোর্নিয়া এবং আরেক পাশে নিউইয়র্ক। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে এই দুই অঙ্গরাজ্যের দূরত্ব প্রায় তিন হাজার মাইল। এই দুই অঙ্গরাজ্যের একটি এখন দাবানলে পুড়ছে, অপরটি ভাসছে বন্যার পানিতে। টর্নেডো আঘাত হেনেছে নিউইয়র্কসহ এর আশপাশের অঙ্গরাজ্যগুলোয়। আর দাবানলে জ্বলছে ক্যালিফোর্নিয়া ও এর আশপাশের অঙ্গরাজ্যগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে, আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা ও টর্নেডোয় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিউইয়র্কে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সেখানকার পাতাল রেলস্টেশন।

অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে ভেসে গেছে অনেকের গাড়ি। আবার এসব গাড়িতে আটকা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। শুধু নিউইয়র্কে এমনটা ঘটছে, তা নয়। নিউ জার্সি, কানেটিকাট, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, পেনসিলভানিয়াতেও বন্যা ও টর্নেডো আঘাত হেনেছে। মৃত্যুর খবর আসছে এসব অঙ্গরাজ্য থেকেও।

অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, পেনসিলভানিয়া ও নিউইয়র্কের প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বন্যার ক্ষতি কেমন হয়েছে, এর কিছু ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো। এসব ছবির একটিতে দেখা যায়, মিসিসিপিতে ঘূর্ণিঝড় আইডার ফলে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে অনেক এলাকা, বিশেষ করে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা। একতলা অনেক বাড়ি ডুবে গেছে। ডুবে গেছে সড়কও। ফলে অনেকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আর নিউইয়র্কে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন। স্থগিত করা হয়েছে নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির সঙ্গে উড়োজাহাজ ও রেল যোগাযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই দুই অঙ্গরাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সেখানকার পরিস্থিতিকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

নিউ জার্সিতে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে ঘর
ছবি: এএফপি

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়াতেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তবে সেটা দাবানলের কারণে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের দাবানল গত বছরের দাবানলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ক্যালডর ফায়ারে ইতিমধ্যে দুই লাখ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত ১৪ আগস্ট সেখানে দাবানল শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দুটি কাউন্টিতে এই দাবানল এখন জ্বলছে। এই আগুন এখন নেভাডার দিকে ছুটছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই দাবানলে ইতিমধ্যে ৬০০টির বেশি ভৌত অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। বিবিসি বলছে, এই দাবানলের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় ৩২ হাজার ভবন। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে আরেকটি দাবানল শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের মাঝামাঝি। ওই দাবানলে এ পর্যন্ত আট লাখ একর বনভূমি পুড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, পাঁচটি কাউন্টিতে এই দাবানল এখন জ্বলছে। ৪৯ দিন ধরে জ্বলছে এই আগুন। শুধু ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা নেভাডা নয়, কদিন আগে পুড়েছে অ্যারিজোনাও।

দাবানলে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়ার বন
ছবি: রয়টার্স

ঝুঁকিতে সংখ্যালঘুরা

যুক্তরাষ্ট্রের বন্যার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন। আর দেশটির এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) নতুন একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংখ্যালঘুরা।

ইপিএর গবেষণায় উঠে এসেছে, বন্যার ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের (নেটিভ) বসবাসের প্রবণতা বেশি। উল্টো দিকে দাবদাহে মৃত্যু যেদিকে বেশি হয়, সেই দিকেও আফ্রিকান-আমেরিকানদের বসবাসের প্রবণতা বেশি। এই গবেষণা প্রতিবেদন এমন সময়ে প্রকাশ করা হলো, যার কদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় আইডা আঘাত হেনেছে। আর এর আঘাতে লুইজিয়ানা ও মিসিসিপিতে কৃষ্ণাঙ্গ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইপিএর পরিচালক মাইকেল রিগান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফল আমরা এখন পেতে শুরু করেছি। দাবানল বা দাবদাহ থেকে শুরু করে ভয়াবহ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়—সবই আঘাত হানছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। মানুষ প্রস্তুতির খুব সময়ই পাবে।’

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বর্ণভেদে যারা সংখ্যালঘু, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দাবদাহে তারা মারা পড়বে বেশি। আবার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার বৃদ্ধির ফলে তারাই বেশি সম্পদ হারাবে।